এবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চেয়ে এবং নতুন ভ্যাটনীতির প্রতিবাদে আগামী ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশে হরতাল পালনের ডাক দিলেন পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। তাতেই শোনা যাচ্ছে, তিনি আওয়ামী লীগের কোনও এক নেতাকে এই নির্দেশ দিচ্ছেন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যত দিন যাচ্ছে, শেখ হাসিনার তৎপরতা অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারত সরকারও তাঁকে অনেকটাই ছাড় দিয়েছে, যাতে তিনি নিজের মতো করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনরায় একটা জায়গা তৈরি করতে পারেন। ফলে দিল্লির অজ্ঞাতবাসে বসেই তিনি বাংলাদেশ এবং বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন। এমনকি বাংলাদেশে পূনরায় একটা ইউনূসবিরোধী আন্দোলন যাতে দানা বাঁধতে পারে, সেই চেষ্টাও করে চলেছেন শেথ হাসিনা। আর সেই চেষ্টার প্রথম পর্যায় হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দুটি কর্মসূচি হাতে নিলেন। আর এমন একটা সময় বেছে নিলেন, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন পাকা রাজনীতিবিদ যেমন সময়কে গুরুত্ব দেন, তেমনই শেখ হাসিনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণের দিনকে টার্গেট করেছেন।
আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে চরম কিছু কথা বলেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময়ই ডোনাল্ড ট্রাম্পের কয়েকটি মন্তব্য চাপে ফেলেছিল মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনকে। সেই সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ঘটে চলা লাগাতার নির্যাতন, হামলা নিয়ে জো বাইডেন প্রশাসনকে একহাত নিয়েছিলেন। এবং দাবি করেছিলেন, যদি এই মুহূর্তে আমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকতাম, তবে বাংলাদেশে এভাবে হিন্দু নির্যাতন হতে দিতাম না। এই মন্তব্য, ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। সেই ট্রাম্পই বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসছেন।
এবার প্রেসিডেন্ট পদেও শপথ নেবেন। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো হয়নি। এখনও সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা থামেনি। যত অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তত গ্রেফতার হয়নি। অপরদিকে, চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভুর জামিনও অমিল। তার উপর আবার সম্প্রতি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু আদিবাসীদের উপরও হামলার ঘটনা ঘটল খোদ রাজধানী ঢাকায়। ফলে ট্রাম্প এই বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়, তার দিকেই তাঁকিয়ে রাজনৈতিক মহল। অপরদিকে, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিও এই মুহূর্তে টালমাটাল পরিস্থিতিতে আছে। সে দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে, ডলার সংকটও বেড়ে চলেছে। অপরদিকে বিদেশী ঋণ নেওয়ার শর্তে শতাধিক পণ্য ও পরিষেবার উপর অতিরিক্তি ভ্যাট চাপাতে বাধ্য হয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার। সবমিলিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকের। ফলে মুহাম্মদ ইউনূস এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উপর ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। আর এই সময়টাকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন শেখ হাসিনা।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের এবং আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের মন বুঝতেই শেখ হাসিনা সুচতুরভাবে একটা হরতালের ডাক দিলেন। তিনি ভালোভাবেই জানেন, ইউনূস প্রশাসন এবং সেনার একটা অংশ কোনও মতেই চাইবে না হরতাল হোক। ফলে তাঁরা পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করবেন হরতাল ঠেকাতে। অপরদিকে কোন কোন এলাকায় হরতালের জন্য গোলমাল হয়, সেটাও মেপে নিতে পারবেন তিনি। তাই ১৮ জানুয়ারির দিনটি বেছে নিয়েছেন পাকা রাজনীতিবিদ শেথ হাসিনা। কারণ, তার একদিনের ব্যবধানেই ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। ফলে যদি হরতাল নিয়ে বড় গোলমাল হয়, সেটা ট্রাম্পের নজরে আনতে সুবিধা হবে আওয়ামী সমর্থকদের। পরদিন অর্থাৎ, ১৯ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে ভার্চুয়াল ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। তার আগে হরতালের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া দুটিই দেখে নিতে পারবেন তিনি। ফলে পরবর্তী নীতি নির্ধারণ করতে সুবিধা হবে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেত্রীর। অন্যদিকে, ট্রাম্পের শপথের আগে বড় ধরণের কোনও অশান্তি কোনও মতেই চাইবেন না ইউনূস এবং তাঁর উপদেষ্টারা। ফলে এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা তাঁদের কাছে বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ালেন। বলা হয়, বঙ্গবন্ধু কণ্যা হাসিনা বাংলাদেশের শিরা-উপশিরা চেনেন। তিনি জানেন, কোন সময়, কোন পরিস্থিতিতে, কিভাবে নজর ঘোরাতে হয়। আর সেই চালই দিলেন আওয়ামী নেত্রী। এবার ইউনূস সেই চালের ধাক্কা কিভাবে সামলান, সেটাই এখন দেখার।
Discussion about this post