বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়ে গেল বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের। যে বৈঠক বাংলাদেশের কাছে ছিল অপেক্ষার। বহু অনুরোধ, আবেদন করে শেষমেশ নরেন্দ্র মোদীর দেখা পেলেন নোবেল জয়ী। বৈঠকের পর অফিসিয়ালি ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন সাক্ষাৎকারের বিষয় নিয়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম কিছু কথা লেখেন আলোচনার বিষয় সমুহ নিয়ে। কিন্ত তিনি যেগুলি লিখেছেন, সেগুলি নিয়ে প্রবল আলোচনা চলছে। কারণ যে যে বিষয় উত্থাপন করছেন, সেগুলি নিয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় হয়নি। প্রবলভাবে সরব হয়েছে ভারতের বহু গণমাধ্যম।
আসলে মোদী এবং ইউনূসের বৈঠক নিয়ে নিজের মত করে বিবৃতি দিয়েছেন শফিকুল আলম। নরেন্দ্র মোদী ও ইউনূসের মধ্যে যে বিষয়ে কথবকথন হয়নি, সেই বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এই প্রেস সচিব। এই বৈঠকে যে যে বিষয়ে আলোচনা হয়, সেগুলি নিজের ফেসবুকে লেখেন শফিকুল। তিনি পোস্টে লিখেছেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মহম্মদ ইউনূসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। বৈঠকে মোদী বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকাকালীন আমরা আপনার প্রতি তার অসম্মানজনক আচরণ দেখেছি। কিন্তু আপনাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়েছি। তিনি আরও লিখেছেন, অধ্যাপক ইউনূস যখন শেখ হাসিনার প্রত্যপনের কথা উত্থাপন করেন, তখন মোদীর প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না। তবে অসমর্থিত সূত্রের বরাদে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনূস মোদীর বৈঠক নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বক্তব্য ক্ষতিকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এমনকি এই বৈঠকে মোদীর করা মন্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে বলা হয় ওই প্রতিবেদনে। এমনকি এই গণমাধ্যমটি দাবি করেছে, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যপনের অনুরোধের বিষয়ে প্রেস সচিবের বক্তব্যের কোনও ভিত্তি নেই। অর্থাৎ টাইমস অফ ইন্ডিয়া স্পষ্ট করে বলে দিল, বাংলাদেশের প্রেস সচিবের পক্ষ থেকে যে মন্তব্য করা হচ্ছে, সেগুলি সবই ভিত্তিহীন এবং চর্চায় থাকার জন্য তিনি এমন মন্তব্য করছেন।
উল্লেখ্য, তাইল্যান্ডে বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের আর্জি জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস। তবে শুরুর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই আবেদনের কোনওরকম ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাননি এবং তিনি বারে বারে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসতে নারাজ। তবে শেষমেষ বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনের নৈশভোজের অনুষ্ঠানে ইউনূসের পাশেই বসতে হল নরেন্দ্র মোদিকে। শেষমেষ শুক্রবার হয়ে গেল দুজনের বৈঠক।
নরেন্দ্র মোদী এক্স এ লিখেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। দুই দেশের একটি গঠনমূলক ও জনগণ কেন্দ্রিক সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, এবং সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। যাতে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা না ঘটে, তারই নিশ্চিত করেছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি যারা এর সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।
অন্যদিকে গোপন সূত্রে খবর, গোটা বৈঠকে মোহাম্মদ ইউনুস হাসিনা নিয়ে কথা বলতে গেলে, নরেন্দ্র মোদি তাকে থামিয়ে দেন। অর্থাৎ গোটা বৈঠকে হাসিনা নিয়ে তেমন কোনও কথাই ওঠেনি। তারপরও বাংলাদেশের প্রেস সচিব এই ধরনের মন্তব্য করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এবার ভারতের তরফে উল্টো চাপ গেলে কি করবে বাংলাদেশ! সেটাই দেখার।
Discussion about this post