নয়া দিল্লির পরিস্থিতি থমথমে, সাউথ ব্লক ও নর্থ ব্লকে তৎপরতা অনেকটাই বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন, আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একের পর এক বৈঠক করছেন বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে। নজরে পশ্চিমবঙ্গ। একটা ঝড়ের আগে পরিবেশ যেমন থমথমে এবং শান্ত হয়ে যায় এই মুহূর্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মধ্যেও তেমনি এক শান্তি বিরাজ করছে। যা কিছু চলছে অতি গোপনে, রাতের অন্ধকারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন, একই সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৈঠক করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে। পাশাপাশি তিনি বৈঠক করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সঙ্গে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন জম্মু ও কাশ্মীর সফর বাতিল করা হয়েছে। একইভাবে বাতিল হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বহু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। এটা কিসের ইঙ্গিত? এই মুহূর্তে দেশের সামনে কয়েকটি বড় ইস্যু রয়েছে। যেমন, সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ আইন নিয়ে মামলা, সুপ্রিমকোর্টের আরেকটি নির্দেশ যেখানে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতি সম্মতি ছাড়াই বিল পাশের মতো বিষয়। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইসু হলো পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা ও তাতে দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি। দিল্লিতে এই তৎপরতা ঠিক কোন কারণে সেটা অবশ্য জানা যাচ্ছে না। তবে এটুকু বোঝা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই বড় কোন পদক্ষেপ নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সবগুলি বিষয়ের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা, বিশেষ করে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদে যে ভয়াবহ হিংসার ঘটনা সামনে এসেছে সেটা নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গুলির রিপোর্ট যথেষ্ট অসস্তিতে ফেলেছে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে। ফলে এই একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই প্রসঙ্গ নিয়ে যে আলোচনা একেবারেই হয়নি তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। বিশেষ সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। যা অনেক আগেই করার মতন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে সে পথে এগোয়িনি নরেন্দ্র মোদি সরকার। কিন্তু এবার সেরকমই পরিস্থিতি এতটাই জোরালো হয়েছে যে এবার সেই পথে এগোনো ছাড়া কোন উপায় নেই কেন্দ্রের সামনে। কারণ পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার পক্ষে একটা বড় হুমকি বলেই মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। তাদের মধ্যে কি আলোচনা হয়েছে, কেন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ভবনে গেলেন সেটা নিয়ে অবশ্য কিছু জানানো হয়নি। সাধারণত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর এই সৌজন্য সাক্ষাৎ মাঝেমধ্যেই হয়। তবে অকারণে সাক্ষাৎ কোন বিশেষ কারণেই হয়। যেমন কেন্দ্রীয় সরকার যদি কোন করা আইন বা কোন কড়া পদক্ষেপ নিতে চায় অথবা যদি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয় সে ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করে আসেন। এবারও তাদের সাক্ষাৎকার অনেকটাই অস্বাভাবিক। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জম্মু-কাশ্মীর সফর বাতিল করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আজ আমাদের আলোচনার বিষয় পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে, কি হবে না, এই বিষয়ে।
ওয়াকফ আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ধরনের বয়ান দিচ্ছেন তা পুরোপুরি রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। দেশের সংসদের উচ্চ কক্ষ ও নিম্ন কক্ষ অর্থাৎ রাজ্যসভা ও লোকসভায় ওয়াকফ বিল পাস হয়ে যাওয়ার পর সেটা পুরোদস্তুর আইনে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে এই আইন লাগু হবে না। একটা অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বপূর্ণপদে থেকেও তিনি কিভাবে দেশের আইনকে অস্বীকার করেন সেই প্রশ্ন উঠছে। এই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে যেরকম সুপ্রিমকোর্টে মামলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সেই পথে এগোতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি, বরং তিনি “ল অফ দ্য ল্যান্ড”-কেই অস্বীকার করছেন। এই ধরনের মন্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার পক্ষে যথেষ্ট প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হতেই পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি এবার মুর্শিদাবাদের হিংসা নিয়ে সরাসরি বিএসএফ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জিমদের সম্মেলনের বক্তৃতার অনেকটা অংশ জুড়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় ছিলেন অমিত শাহ। শুধু শাহকে নিশানা করাই নয়, তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘অনুরোধ’ পর্যন্ত করলেন মমতা।
যেখানে দেশের অন্যতম প্রধান সীমান্ত রক্ষীবাহিনীকেই অস্বীকার করছেন কোনও এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোনও অবস্থান বজায় থাকে না। ফলে দেশের নিরাপত্তা ও অখন্ডতা ঠিক রাখতে ওই রাজ্যতে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ করা ছাড়া। এতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বহু মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য। কিন্তু সেটা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কিন্তু তুমি যখন ওয়াকফ আইন লাগু করতে অস্বীকার করা, অথবা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রতি গুরুতর অভিযোগ এনে দেশের নিরাপত্তাকে বিকৃত করার মতো মন্তব্য করা থেকে বিরত হচ্ছেন না, তখন কেন্দ্রের কাছে আর অন্য কোন উপায় থাকে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। ফলে খুব শীঘ্রই যদি পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় , তাহলে তা সাংবিধানিক দিক থেকে খুব একটা ভুল হবে না।
Discussion about this post