বাংলাদেশের সামনে এখন এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, একটা সমস্যার সমাধান করলে সামনে আরও পাঁচটা সমস্যা চলে আসছে। মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধাক্কা খেয়ে এখন চিনের মুখাপেক্ষী হয়েছেন। কিন্তু তার প্রধান প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান ঠিক উল্টো পথে ধাবিত হচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য ভারত বা কখনও রাশিয়ার শরণাপন্ন হচ্ছেন। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নিজেদের বেস স্টেশন তৈরি করার জন্য মরিয়া। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল। মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি চিন সফরে গিয়ে চিনকে খোলাখুলি আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি ভারতের সেভেন সিস্টার্স বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য “ল্যান্ডলকড” বলে উল্লেখ করে চিনকে তাদের অর্থনীতির সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়ে আসেন। এটা ভারতের আভ্যন্তরে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বড় হুমকি।
মুহাম্মদ ইউনূস চিন ও পাকিস্তানকে নিয়ে যেমন একটা ভারত বিরোধী অক্ষ তৈরি করতে চাইছেন, তেমনি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান চাইছেন ভারতকে সঙ্গে নিয়েই ভবিষ্যতের জন্য এগোতে। তাই তিনি ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু রাশিয়াকে সঙ্গে পেতে সেই দেশ সফর করলেন। বাংলাদেশের অস্ত্র কারখানা গুলিতে পাকিস্তানের রমরমা কমানোর জন্য রাশিয়ায় গিয়ে জেনারেল ওয়াকার কয়েকটি চুক্তি করে এসেছেন বলেই খবর। তিনি রাশিয়া থেকে ফেরার পরেই আমরা দেখতে পেলাম তিনটি রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে চার দিন অবস্থান করল। তা ঠিক আগেই প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাশিয়া ও ভারত বঙ্গোপসাগরে যুদ্ধ মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছিল। যদি আমরা দুই আর দুয়ে চার করি, তাহলে বুঝবো ভারতের পরামর্শ মতোই রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশে গিয়ে অবস্থান করলো। ভারতের এই পদক্ষেপের ফলে, বাংলাদেশে তিনটি পক্ষ আমরা সামনা হয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের নর্থ ইস্ট নিউজের এক বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মার্কিন-সমর্থিত গোপন অভিযানের নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১০ম, ১৭তম এবং ২৪তম ডিভিশন মোতায়েন করা হতে পারে, তবে এই ইউনিটগুলি কোনও সামরিক ভূমিকা পালন করবে না এবং রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী বাহিনীর একটি জোটকে কেবল রসদ এবং সরবরাহ সহায়তা প্রদান করবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই চট্টগ্রামের টেকনাফের কাছে একটি বিশাল স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে, যেখান থেকে সরবরাহ এবং অন্যান্য উপকরণ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে যা জোট বাহিনী মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে মার্কিন-সমর্থিত প্রক্সি যুদ্ধের অংশ হিসাবে ব্যবহার করবে, যা এখন রাখাইন রাজ্যের মাত্র তিনটি শহরের কার্যকর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পাশাপাশি কক্সবাজার বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা রাখাইন রাজ্যে আসন্ন সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অর্থাৎ, কয়েকদিন আগেই যে মার্কিন সেনাকর্তা জোয়েল পি ভোয়েল ঢাকা সফরে এসেছিলেন, তিনিই এই প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে। তবে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান চাইছেন না এই কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করতে। কারণ, মিয়ানমারে রসদ ও অন্যান্য সাহায্য পাঠানোর নাম করে যুক্তরাষ্ট্র সেই বাংলাদেশে একটি সেনাঘাঁটি তৈরি করতে মরিয়া। সামনে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন। বলা হচ্ছে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে এই প্রক্রিয়ায়। আর এই কারণেই রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মির শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করে একটা বার্তা দিতে চেয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, মিয়ানমারে আরাকান আর্মি এবং চিন লিবারেশন ফ্রন্ট-সহ অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে একত্রিত করে মিয়ানমারের সামরিক জুন্টা বাহিনীর বিরুদ্ধে পুরোদমে যুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়ার। আর এতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকেও আরাকান আর্মির সঙ্গে একযোগে লড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যাতে মিয়ানমারে বেকায়দায় পড়ে চিন ও রাশিয়া। কারণ, এই মুহূর্তে মিয়ানমারের সামরিক জুন্টা শাসকদের সাহায্য করছে এই দুটি দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিপ্রেত হল মিয়ানমার ভেঙে রাখাইন ও চিন প্রদেশ মিলিয়ে একটা খ্রিষ্টান রাষ্ট্র তৈরি করা, যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। যে দাবি অনেক আগেই শেখ হাসিনা করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের সেনাপ্রধান এই পরিকল্পনা বুঝে ফেলে রাশিয়া সফরে যান এবং রাশিয়াও তড়িঘড়ি চট্টগ্রামে তাঁদের তিনটি সামরিক জাহাজ মোতায়েন করে দেয়। উদ্দেশ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদতে বাংলাদেশ সেনা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় যে সামরিক ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা করছে সেটা দমন করা। আসলে বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের হাতে বাহিনীর এই মুহূর্তে পূর্ণ কর্তৃত্ব নেই। যা নিয়ন্ত্রণ করে মুহাম্মদ ইঊনূস।
Discussion about this post