সবদিক গিয়ে এক দিকে ঠেকেছে বাংলাদেশ। চিনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। চিন সফরে গিয়ে তিনি ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে চিনকে বাংলাদেশে আহ্বান জানিয়েছিলেন তাঁদের অর্থনীতিকে সম্প্রসারণ করার জন্য। কিন্তু প্রবল মার্কিন চাপে থাকা চিন ইউনূস দেশে ফেরার পরই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে ভারতের দিকে। যা বাংলাদেশের কূটনৈতিক পরাজয়ের সামিল। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে ক্রমশ কোনঠাসা হতে থাকা বাংলাদেশের কাছে এখন শিব রাত্রির সলতে বলতে রয়ে গিয়েছে একমাত্র পাকিস্তান। ১৫ বছর পর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হল পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক। পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে বুধবারই ঢাকায় পৌঁছেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালোচ। বৃহস্পতিবার সাড়ে সকাল ১০টায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের এই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন। আর পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালোচ।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, বিমান যোগাযোগ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন দেনা-পাওনা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এদিন বৈঠকের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালোচ দেখা সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। এদিন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে দুই দেশ সমর্থ হয়েছে। এবং মুক্তিযুদ্ধসহ তাদের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়েও কথা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সাড়া বিশ্বেই যখন পাকিস্তান কার্যত একঘরে হয়ে যাচ্ছে, তখন একমাত্র বাংলাদেশ তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উদগ্রীব। এর পিছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে কূটনৈতিক মহলের ধারণা, বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মহলে কার্যত একঘরে। গত বছর আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন করিয়ে একটা নতুন সরকার গঠন করে দেওয়া। কিন্তু সংস্কারের নামে তাঁরা নির্বাচনটাই দূরে ঠেলে দিতে চাইছেন। বিশেষ করে জামাত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগী মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার। বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্খা ছিল মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। কিন্তু তিনি সেভাবে কোনও আন্তর্জাতিক ফান্ড নিয়ে আসতে পারেননি। এমনকি বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ থেকেও ঋণের কিস্তি আনতে পারছেন না। এর পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে শত্রুতা বাড়িয়ে বাংলাদেশ কার্যত বাঘের পিঠে সাওয়ার হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার ফলে যেমন ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা হারিয়েছে বাংলাদেশ, তাতে প্রায় ২০০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
এখন চিন বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর তাঁদের সামনে এখন শুধুই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটা সামরিক বেস তৈরির সুযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যা ওয়াশিংটন লুফে নেয় বলেই মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে মিয়ানমারে একটা করিডোর তৈরির কাজ শুরু করেছে মার্কিন সেনা। সেই সুযোগে কক্সবাজারে একটা সামরিক ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও রাশিয়াকে টেনে এনে ভারত মস্ত একটা চাল চেলেছে। ফলে বাংলাদেশের কাছে এখন একূলও যাচ্ছে, ওকূলও যাচ্ছে।
Discussion about this post