ওয়াকফ আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলল সে দেশের অন্তবর্তী সরকার। যদিও ভারতের তরফে এমনই অভিযোগ তোলা হচ্ছিলো। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট দিয়েছিল মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক হিংসায় বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের হাত রয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচারিত এই সংক্রান্ত খবরের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার কড়া বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইনুনূসের প্রেষ সচিব শফিকুল আলম তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এই বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বাংলাদেশের নাম জড়ানোর যে কোনও ধরনের প্রচেষ্টাকে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি’। শফিকুল আলম আরও বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার মুসলিমদের ওপর হামলা এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। বাংলাদেশের শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার মুসলিমদের ওপর হামলা এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনা হল, মুর্শিদাবাদের শামশেরগঞ্জ ধুলিয়ান সুতি সংলগ্ন এলাকায় আক্রান্ত হিন্দুরাই। ৪০০-র বেশি পরিবার কোনভাবে নদী পেরিয়ে মালদহ জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন। এই অবহে ভারত সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি বাংলাদেশি দুষ্কৃতকারীদের হাত থাকার কথা দিল্লিকে জানিয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের সঙ্গে এক বৈঠকে দাবি করেছেন, যদি মুর্শিদাবাদের হিংসায় বাংলাদেশী দুষ্কৃতীরা দায়ী থাকেন তাহলে এর জন্য দায়ী বিএসএফ। আর সেই সুত্রে হিংসার দায় বর্তায় কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উপরে।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে ভারত যে লাগাতার সরব হয়েছে। তার বিপরীতে এবার বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুসের তদারকি সরকার মুসলিম কার্ড খেলার চেষ্টা করতে শুরু করলো। উল্লেখ্য, চলতি মাসের গোড়ায় ব্যাঙ্ককে মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও বাংলাদেশের তদারকি সরকার বরাবরই এই বিষয়টি অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করে আসছেন সে দেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ আসলে রাজনৈতিক ঘটনার বহিঃপ্রকাশ। মুর্শিদাবাদের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়ার পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারতও। শুক্রবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত নয়, বাংলাদেশের উচিত নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ সরকারের ওই প্রতিক্রিয়া খারিজ করে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক যা বলেছে তা কূটনৈতিক মহলের মতে ছদ্ম ধারণা তৈরির কপোট প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। যেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে দুই সম্প্রদায়ের মানুষই হিংসার শিকার হয়েছে। নিহত তিনজনের দু’জন হিন্দু ও একজন মুসলিম সম্প্রদায়ের। পাশাপাশি ঘরবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য বিনষ্ট হয়েছে দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরই। কিন্তু বাংলাদেশের তদারকি সরকার উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে শুধুমাত্র মুসলিমদের প্রানহানি ও সম্পত্তি বিনিষ্ট হওয়া নিয়ে সরব হল। পাশাপাশি এই বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সোশ্যাল মিডিয়ায় ইংরেজিতে বক্তব্য লিখেছেন। এর থেকে স্পষ্ট তিনি আন্তর্জাতিক মহলে একটা বার্তা দিতে চাইলেন যে ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন বিপন্ন। অর্থাৎ মোদি সরকার যে বাংলাদেশে হিন্দুরা বিপন্ন বলে সরব হয়েছে, তারই পাল্টা মুডলিম তাস খেলতে চাইছেন মুহাম্মদ ইউনূস। ফলে তাঁরা মুখে যতই বলুক ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী, কাজে তার উল্টো প্রমান পাওয়া যাচ্ছে। ভারতও যে বিষয়টি হালকাভাবে নিচ্ছে না সেটাও বোঝা যাচ্ছে। ফলে, খুব শীঘ্রই একটা বড় পদক্ষেপ যে ভারত নিতে পারে এটা তারই ইঙ্গিত।
Discussion about this post