সুপ্রিমকোর্টের রায়ে যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকদের সাময়িক স্বস্তি। অর্থাৎ আগামী 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি বহাল থাকছে, পরবর্তী নিয়োগ পরীক্ষা হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু এর মাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন জমা হয়েছে তাদের কর্মপদ্ধতিকে ঘিরে। তারা কি আগের মতই ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠনে যোগদান করতে পারবেন?নাকি শুধুই তারা স্কুলে উপস্থিত থাকবেন? কোথাও গিয়ে কি তারা সিভিক শিক্ষককে পরিণত হল? প্রশ্ন বিভিন্ন মহলের।
আমরা সকলেই জানি, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি বাতিল হয়েছিল প্রায় ২৬০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার। এরপর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফ থেকে সুপ্রিম কোর্টে একটি আর্জি রাখা হয়েছিল। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে তাদের আরো কিছুটা সময় দরকার। আর এই মধ্যবর্তী সময়ে যারা অযোগ্য বলে চিহ্নিত নয় অর্থাৎ যারা এখনো পর্যন্ত যোগ্য হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে তারা যেন আবারও স্কুলে যেতে পারেন এবং তাদের চাকরিটা যেন বহাল থাকে। এরপর দেখা গেল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এই আবেদনে সাড়া দিল সুপ্রিম কোর্ট। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আজি মেনেই রায় দান করলো সুপ্রিম কোর্ট।
এবার প্রশ্ন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কেন এই ধরনের আবেদন করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হলো। আমরা দেখেছিলাম 2016 সালের এসএসসি পুরো প্যানেল পাতিল হওয়ার পর চাকরি হারাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৈঠকে জানিয়েছিলেন যে তিনি আগামী তিন মাসের মধ্যে সবটা ঠিক করার চেষ্টা করবেন,কারোর চাকরি যাবে না।
কিন্তু সেই সময় এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ বসু জানিয়েছিলেন এই গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াটি মাত্র তিন মাসের মধ্যে পুনরায় সম্পন্ন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আর এসএসসির এই বক্তব্যের কথা মাথায় রেখেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সেই আবেদনের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা। অর্থাৎ যারা ‘টেন্টেড’ বলে চিহ্নিত নন, এমন শিক্ষকেরা আপাতত স্কুলে যেতে পারবেন। পাশাপাশি নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হল। সেই সঙ্গে কোনও বিশেষ সুযোগ সুবিধা পাবেন না তাঁরা। তবে আগামী ৩১ মে-র মধ্যে চলতি বছরেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করবে এই বিষয়টি উল্লেখ করে রাজ্যকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হবে পুরো বিষয়টি । চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে শেষ করতে হবে গোটা নিয়োগপ্রক্রিয়া। অর্থাৎ, আপাতত যাদের নাম এসএসসি ও সিবিআইয়ের টেন্টেডের তালিকায় নেই, তাঁরা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন এবং শিক্ষকতা চালিয়ে যেতে পারবেন। এবং তাদেরকেও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে এবং উত্তীর্ণ হতে হবে তাদের চাকরি বহাল রাখার জন্য। অর্থাৎ আগামী ৬ মাস তাদের শিক্ষকতার পাশাপাশি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিতে হবে।
পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টেও জানিয়েছে যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফ থেকে সেই সময় সীমার মধ্যে যদি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় তবে আদালতের তরফেও এই রায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এখানেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আগামী ছয় মাসের জন্য এই যোগ্য শিক্ষকেরা সিভিক শিক্ষকে পরিণত হলেন।
উল্লেখ, চাকরিহারাদের একাংশ বলছেন, শীর্ষ আদালতের রায় জানানো হয়েছে ৬ হাজার ২৭৬ জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। সেই অবস্থায় পৃথকীকরণ করিয়ে যোগ্যদের চাকরি বাঁচানো যেত। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাময়িক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল । গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-দের রাখা হল না। সুপ্রিম কোর্ট পৃথকীকরণ করিয়ে যোগ্যদের রাখতে পারত।
সুপ্রিম কোর্টের নতুন রায়ের পর বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন,‘‘আইনের বিষয়টি আমি দেখে নেব। আমাদের আইনজীবীরা দিল্লি থেকে ফিরুন।’’ শিক্ষাকর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘চিন্তাটা আমার উপর ছেড়ে দিন। তাড়াহুড়ো করবেন না। সরকারের উপর আস্থা রাখুন। ভরসা রাখুন।’’ ঠিক কি কি বললেন মুখ্যমন্ত্রী শুনুন,,
কিন্তু সবকিছুর পরে এখন দেখার শীর্ষ আদালতের সময়সীমা অনুযায়ী মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সফল হয় কিনা।
Discussion about this post