মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি নাকি ভারত ও পাকিস্তানকে বলেছেন, যুদ্ধ না থামালে এই দুই রাষ্ট্রের সঙ্গে আমেরিকা কোনও বাণিজ্য করবে না। যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, সোমবার রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কিছুক্ষন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বোমা ফাটান। তিনি দাবি করেন, বিবদমান দুই দেশকেই তিনি চাপ দিয়েছিলেন সংঘর্ষ বন্ধ করার জন্য। অন্যথায় ব্যবসার উপর প্রভাব পড়বে বলেও হুমকি দেন। ট্রাম্পের এই বক্তব্য সামনে আসার পরই প্রবল সমালোচনা শুরু হয় দেশ জুড়ে। বিশেষ করে বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুলেতে শুরু করে, মার্কিন চাপেই কি নরেন্দ্র মোদি সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি হলেন? যার জবাব অত্যন্ত সুকৌশলে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
“গায়ে মানে না আপনি মোড়ল”, বাংলায় একটা প্রবাদ সেই প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত। এই প্রবাদের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মার্কিন মসনদে বসার পর থেকে আশা করা হয়েছিল তিনি ভারতের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক রেখে চলবেন। কিন্তু আদতে দেখা গিয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ভারতকে তিনি এক সারিতে রেখেছেন। যদিও শপথ নেওয়ার পরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ওয়াশিংটনে। তারপর থেকে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা নিয়মিত বৈঠক করছেন ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা তৈরি করতে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ডোনাল্ড ট্রাম্পই, তাঁর বিকল্প নেই। ফলে কখনও তিনি ভারতকেও উচ্চ ট্যারিফ যোগ করার হুমকি দিয়েছেন, আবার কখনও ঢোক গিলে বলেছেন ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যোগ্য বাণিজ্য চুক্তি করা হবে। পৃথিবীর বহু দেশেই তিনি ১০০ শতাংশের বেশি হারে শুল্ক চাপালেও, ভারত সেই তালিকায় কখনওই স্থান পায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প আপন মর্জির মালিক, তাই তিনি কখন কি বলেন সেটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। যেমন ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের আবহে তিনি আগ বাড়িয়ে টুইট করে দিলেন মার্কিন মধ্যস্ততায় যে দুই দেশই যুদ্ধ বিরতিতে রাজি হয়েছে। আবার মার্কিন প্রশাসন দাবি করলো তাঁরা মধ্যস্ততায় যাবে না, ভারত ও পাকিস্তান নিজেরাই স্থির করবে। আবার পরক্ষনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিক সম্মেলনে বলছেন, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ বন্ধ করা গিয়েছে। দুই দেশেরই প্রচুর পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছিল, দুই দেশের কেউই থামতে চাইছে না। ট্রাম্প আরও জানান, এই অবস্থায় মধ্যস্থতা করতে নেমে দুই দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য বন্ধের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হল ট্রাম্পের এই বক্তব্যের সঙ্গে ভারত কতটা সহমত। সোমবারই সংবাদ সংস্থা পিটিআই উচ্চ পর্যায়ের সরকারি সূত্র অনুযায়ী দাবি করে, ভারত ও আমেরিকার শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনার সময় বাণিজ্য নিয়ে কোনও কথা হয়নি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাঁর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম পর্যন্ত নেননি। বরং ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী নরেন্দ্র মোদী ও দাবী করেন পাকিস্তানের ডিজিএমও প্রথমে ফোন করে সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দেয়, তাতে ভারত সম্মত হয়েছে। অর্থাৎ, কোনও দেশের চাপ নয়, পাকিস্তানের প্রস্তাবেই সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি হয় ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, অপারেশন সিঁদুর এখন “নিউ নর্মাল”। এটা একটা দিক নির্দেশ করে দিয়েছে। এরপর থেকে ভারতের ওপর যে কোনও সন্ত্রাসী হামলার জবাব ভারত নিজের মতো করে, নিজের শক্তিতে দেবে।
ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যতই লম্বা চওড়া ভাষণ দিক। নিজের ঢোল পেটাতে ব্যাস্ত থাকেন না কেন। নরেন্দ্র মোদি সোমবারে জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর ভাষণে ট্রাম্পের নাম না নিয়েই বুঝিয়ে দিলেন, “গায়ে মানে না আপনি মোড়ল”। আরেকটি বিষয় এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চিনের সঙ্গেও শুল্ক যুদ্ধ স্থগিত করে আলোচনার টেবিলে বসতে চাইছে। ফলে যত দিন যাচ্ছে ততই ঘরে ও বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একদিকে ট্রাম্প যখন টুইট করে ভারত-পাক যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করলেন, সেই দিন রাতেই অর্থাৎ ১০ মে রাতে ভারত পাকিস্তানের মাটিতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মিসাইল হামলা চালায়। এরমধ্যে পাকিস্তানের তিনটি পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার রয়েছে বলেই সূত্রের খবর। ফলে ট্রাম্পের মধ্যস্ততা ও যুদ্ধ বিরতির দাবি সেদিনই নস্যাৎ করে দিয়েছে ভারত। তারপর বিদেশ সচিব ও পরে স্বয়ং মোদিও ট্রাম্পের দাবি নস্যাৎ করেছেন।
Discussion about this post