বাংলাদেশ, যা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পায় কার্যত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহায্য। আজ ৫৪ বছর পর আচমকা পাল্টে গিয়েছে পরিস্থিতি। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশের একটা বড় অংশ চাইছে সেই পাকিস্তানের সঙ্গে মিশে যেতে। গত বছর ৫ আগস্ট, বাংলাদেশে হয়েছে পালাবদল। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় এক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। এরপর প্রায় দশ মাস হতে চলল বাংলাদেশে হয়নি। কারণ মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে গড়িমসি করছে। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত-সহ বিশ্বের বহু দেশ রীতিমতো চাপ তৈরি করছে ইউনুস সরকারের ওপর। তবে কোন এক অজ্ঞাত শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে বর্তমান তদানীকে সরকার নির্বাচনকে দূরে ঠেলতে সম্পূর্ণরূপে সচেষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানকে তারপর থেকে সরিয়ে দিতে উন্মুখ মুহাম্মদ ইউনূস। কারণ শেখ হাসিনার আমলে তাকে সেনাপ্রধান হিসেবে বহাল করা হয়েছিল এবং তিনি শেখ হাসিনার আত্মীয়। যদিও বিগত ৯-১০ মাসে জেনারেল ওয়াকার এমন কোনও কাজ করেননি যাতে ইউনুস সরকার বিপন্ন হতে পারে। তবুও তাকে ঘিরে জল্পনার অবসর নেই।
সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে জোরদার আন্দোলন করলো। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের বাসভবন পর্যন্ত ঘেরাও করে রেখেছিল। বলা হচ্ছে চাপে পড়ে ইউনুস সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। যদিও বাংলাদেশে রাজনৈতিক মহল তা মানতে নারাজ। একটা বড় অংশের দাবি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা এক অন্য অর্থ বহন করে। মুহাম্মদ ইউনূস যে আসলে চাইছে আরও দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে এটা তারিখ প্রথম পদক্ষেপ। পরের পদক্ষেপ অবশ্যই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানকে অপসারণ করা। যদিও বিগত তিন চার মাসে ইউনূস প্রশাসন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা ক্ষুদ্র অংশ মিলিতভাবে সেনাপ্রধানকে সরানোর চেষ্টা করছিল বা এখনো সেই চেষ্টা করে চলেছে।
বাংলাদেশ সেনার কোয়াটার মাস্টার জেনারেল লেফটনেন্ট ফাইজুর রহমান এবং আরেক লেফটানেন্ট কামরুল হাসান সেনাবাহিনীর ভিতর অভ্যুত্থান করার জন্য এখনও সচেষ্ট। তাদের যেমন একদিক থেকে সাহায্য করে চলেছে তদারকি সরকারের একাংশ তেমনি সাহায্য করে চলেছেন আইএসআই গোয়েন্দারা। যদিও সম্প্রতি ভারতীয় সেনা পরিচালিত অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পর্যদস্ত হওয়ায় আইএসআই কিছুটা ব্যাকফুটে। কিন্তু তারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতকে অস্থিতিশীল করতে এখনও সচেষ্ট।।
কেন এ কথা বলছি তার কারণ আছে। প্রথমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠা, তারপর বাংলাদেশ পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র তুলে না দেওয়া সিদ্ধান্ত এবং সব শেষে আওয়ামী লীগের সত্যিই নিষিদ্ধ করার ঘটনা একটা তাৎপর্য বহন করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার আরও দু মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই শৃঙ্খলা যদি জোড়া হয় তাহলে বোঝা যাবে সেনাবাহিনী তথা জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের জন্য বিপদ আসন্ন। আরো একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, সেটা হলো বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে ডঃ খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া। তিনি সেনাবাহিনীর বাড়তি দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ ইউনুস সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর একক কর্তৃত্ব কায়েম করার জন্য এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।
এবার শুধু সেনাবাহিনীর ভেতর একটা অভ্যুত্থান বা ক্যু করে ক্ষমতার হস্তান্তর করানো বাকি। এমনটা মনে করা হচ্ছে যদি ওয়াকার উজ জামানাকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে কামরুল হাসান হবেন বাংলাদেশের পরবর্তী সেনাপ্রধান। এটা হয়ে গেলেই মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে সমস্ত কাটা উপড়ে যাবে। কারণ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার এখনো সচেষ্ট বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচন করানোর বিষয়ে। যেটা কোনভাবেই চাইছেন না মুহাম্মদ ইউনুস। সেনাবাহিনী তথা জেনারেল ওয়াকারকে বিশেষ বার্তা দিতেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, যে হাসনাত আব্দুল্লাহর মতো উঠতি নেতাদের আন্দোলনে যদি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যায় তাহলে সেনাবাহিনীর ভিতরেও একটা অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব। অর্থাৎ ভেবে নেওয়া যেতেই পারে এই রাউন্ডে হাসনাত আব্দুল্লাহরা অনেকটাই এগিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনু বা তাঁর পিছনে থাকা আন্তর্জাতিক শক্তি কি ভাবছেন সেটাও কিন্তু ফেলে দেওয়া যাবে না। তাই, ওয়াকার না হাসনাত? উত্তর হবে ইউনূস ইউনূস।
Discussion about this post