জুন ও জুলাই বিপ্লবের সময় বাংলাদেশে কতজন পুলিশ কর্মী ও আধিকারিকের মৃত্যু হয়েছে, সেই ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা আজও প্রকাশ করা হয়নি। বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম অন্তবর্তীকালীন সরকারের সূত্র উল্লেথ করে দাবি করেছিল সংখ্যাটা ৪৪ জন। কিন্তু সঠিক সংখ্যা কত, সেটা জানার জন্য বাংলাদেশের কোনও মিডিয়া উৎসাহী নয়। এর পিছনে কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, বাংলাদেশের মিডিয়া হাউসগুলি এখন অন্তবর্তীকালীন সরকার দ্বারাই পরিচালিত হয়। অর্থাৎ সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের সরাসরি অভিযোগ। কেউ কেউ দাবি করেন, আওয়ামী লীগের আমলেও বাংলাদেশের গোয়েন্দা দফতর থেকেই সরকারের বিরুদ্ধেও তথ্য পেয়ে যেতেন সাংবাদিকরা। কিন্তু ইউনূসের আমলে গোয়েন্দা দফতরের কেউ সেই সাহস দেখাতেই পারেন না।
বরং এখন বাংলাদেশের প্রেস সচিবালয় থেকে যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, সেগুলিই সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করার রেওয়াজ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। ফলে জুন ও জুলাই ও আগস্ট মাসে ঠিক কতজন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল, তাঁর তথ্য ফাঁস হলে চাপে পড়ে যাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই। তবে বেসরকারিভাবে এই সংখ্যাটা ৫০০-র বেশি বলেই জানা যায়।
মুহাম্মদ ইউনূসের শাসনকাল শুরু হওয়ার পরই দেখা গেল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার বা পুলিশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। সেই ক্ষমতা বারেবারে বৃদ্ধি করে আরও দুই মাসের জন্য করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের পুলিশবাহিনীর হাত থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কেঁড়ে নেওয়া হল।
অর্থাৎ পুলিশের ক্ষমতা এবং সাহসিকতাকে দুরমুশ করতে উদ্যোগী হল ইউনূস সরকার। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, সেনাবাহিনীর হাতে তো ক্ষমতা আছে, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ খুবই নিরাপদ। বিশ্লেষকদের দাবি, মোটেই তা নয়। কারণ, মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর সহযোগীরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আড়াআড়ি বিভক্ত করেই দিয়েছেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের সঙ্গে মোটেই ভালো সম্পর্ক নয় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের। সেটা যে প্রথম দিন থেকেই ছিল, সেটা ফাঁস করে দিয়েছেন ছাত্র নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা সজীব মাহমুদ। গণঅভ্যুত্থানের পর সেনাপ্রধান নিজের হাতে ক্ষমতা না রেখে তা হস্তান্তর করেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে।
এটাই তাঁর অন্যতম ভুল ছিল বলে দাবি অনেকের। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্ষমতার প্রায় সবটাই আত্মস্যাৎ করেছে ইউনূস বাহিনী। ক্ষমতায় আসার পর তিনি তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলী এবং অন্যান্য কমিশনের মাথায় নিয়ে এসেছেন বিদেশী নাগরিকদের। ইউনূস নিজেও দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন এবং মার্কিন ডেমোক্রাট দলের খুব ঘণিষ্ট। তাঁর সরকারের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দৈত নাগরিক। ফলে বাংলাদেশের প্রতি তাঁদের টান যে কম হবে সেটাই স্বাভাবিক। তাঁদের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখা এবং নিজেদের আখেড় গোছানো। আর এটা করতে গিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকারের বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূসদের। ফলে তাঁকেই সরিয়ে দেওয়ার ভয়ানক খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এটাকেই গৃহযুদ্ধ বলছেন ওয়াকিবহাল মহল।
জানা যায়, সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানকে সরাতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে অন্তত দুবার অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা হয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু ওয়াকারের প্রতি এখনও বেশ কয়েকজন শীর্ষ সেনা আধিকারিক আন্তরিক থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে জামাতপন্থী সেনা আধিকারিকরা চাইছেন জেনারেল ওয়াকার উজ জমানকে সরিয়ে দিতে। তাঁদের মদত দিচ্ছে পাক আইএসআই। দুজনের নাম তো প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছে। লেফটানান্ট জেনারেল কামরুল হাসান এবং লেফটানান্ট জেনারেল ফইজুর রহমান। তাঁরা এখনও সক্রিয়। ফলে সেনাপ্রধানের বিপদ এখনও কাটেনি। পাশাপাশি মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন নাগরিক ডঃ খলিলুর রহমানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁকে সেনাবাহিনীর বিশেষ কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ খলিলুর রহমানকে সেনাপ্রধানের মাথার উপর বসিয়ে দিলেন তিনি। বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, দ্রুতই বাংলাদেশে বড় একটা কিছু হবে। সেনাপ্রধানের মেয়াদ খুব বেশি হলে একমাস। যদি না তিনি খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো কিছু করেন।
Discussion about this post