মোদীকে আর চাইছে না মানুষ। ভোটের ফলাফলে তা স্পষ্ট। ৪ঠা জুনের পর থেকে বারংবার এই দাবি উঠে এসেছে বিরোধী শিবির ইন্ডিয়া জোট থেকে। বিরোধীদের দাবিতে কর্ণপাত না করে দেশের ঐক্যবদ্ধ সরকার গড়ে তুলতে তৎপর হয়েছেন মোদী। শপথগ্রহণ শেষ। মন্ত্রক বন্টনও হয়ে গিয়েছে সারা। বিরোধী নয় এবার সঙ্ঘের মন্তব্যে অস্বস্তি বাড়ল দেশের শাসকশিবিরে। নাগপুরের একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন মোহন ভগবতের পরামর্শ বিরোধীদের দেখতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। অর্থাৎ দেশের এনডিএ সরকারের একটি ভুল বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার ঝুলিতে লাভের গুড় হিসেবে যেতে পারে। তাই প্রাধান্য দিতে হবে সকল পক্ষকেই। সবার মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। সঙ্ঘ প্রধানের এমন মন্তব্যের নেপথ্যের কারণ হিসেবে রাজনৈতিকবিদরা মনে করছেন মোদী সরকারের প্রথম দুই পর্বে বিরোধীদের মতামতকে গুড়িয়ে দেওয়ার মনোভাব। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে গতবছর শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন মোট ১৪৬ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। বিজেপির অন্দরে অনেকেই মনে করছেন লোকসভায় বিল পাশ করানোর জন্য বিরোধীদের একচেটিয়া সাসপেন্ড ভালো চোখে নেয়নি অনেকেই। দেশের জনগণ তো বটেই বিজেপির অন্দরেও মোদী সরকারের এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
পাশাপাশি অশান্ত মণিপুরে তৎকালীন মোদী সরকারের নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। ইডি, সিবিআই নিয়ে তৎপর মোদী সরকার মণিপুরকে কেন শান্ত করতে পারছে না, প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। এবার আরএসএস প্রধানের ভাষণে উঠে এল মণিপুর প্রসঙ্গ
সেইসঙ্গে নির্বাচন চলাকালীন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার কু-কথা বলার অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় প্রধানমন্ত্রী ঘৃণাসূচক ভাষণ দিচ্ছেন। বিরোধীরা যে প্রচার করছেন সেটাকে পুরো বিকৃতভাবে হাজির করছেন। একাধিক গ্রুপের মধ্যে তিনি বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছেন। ধর্মের নাম করে তিনি খোলাখুলিভাবে ভোট চাইছেন। অর্থাৎ আদর্শ নির্বাচনী বিধিকে তোয়াক্কা না করেই প্রচার সারছেন মোদী। যা নিয়ে অভিযোগ হয় কমিশনের কাছে। নাম না করে মোদীর কু-কথা প্রসঙ্গেও মন্তব্য করতে ছাড়েননি মোহন ভগবত। আরএসএস প্রধানের কথায়, ভোটে লড়ার সময় একটা মর্যাদা থাকা উচিৎ। সেই মর্যাদা পালন করা হয়নি।
প্রকৃতপক্ষে এইসব ঘটনাগুলি থেকে স্পষ্ট অমিত শাহ, মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপির সঙ্গে গত ১০ বছরে ক্রমশই দুরত্ব বেড়েছে সংঘ পরিবারের। ভোটে বিজেপির খারাপ ফল হতেই দুইয়ের মধ্যে ফাটল আরও স্পষ্ট হল। উপরন্তু সংঘ পরিবারকে কোণঠাসা করে বিজেপির যে একলা চলার নীতি তা বুমেরাং হয় মোদী-অমিত শাহদের জন্য। আর সেই কারণেই ভোটে ঝাপাননি আরএসএসের অনেক কর্মী। তাদের গাছাড়া মনোভাব, বিজেপিকে জেতাতে উদাসীনতা ভোটের রেজাল্টে বিজেপিকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। তাই অনেকেই মনে করছেন মোদীর তৃতীয়বার মসনদে আরোহন অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং। একধারে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া, অন্যদিকে খোদ আরএসএসের শলাপরামর্শ মাথার রেখে কাজ করা, আবার শরিকি ঝঞ্ঝাট। ত্রয়ীকে সামাল দিয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে এগোতে হবে মোদীকে। যদিও বিরোধীরা বলছেন আদৌ কি মোদী কর্ণপাত করবেন আরএসএসের কথায়?
Discussion about this post