ঐতিহ্যমন্ডিত হলং বন বাংলোয় বিধ্বংশী আগুনের জন্য ইঁদুরই কী খলনায়ক? প্রাথমিক তদন্ত অন্তত সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে। জানা গিয়েছে বর্ষার জন্য বন্ধ থাকা হলং বন বাংলোয় বেড়ে গিয়েছিল ইঁদুরের উৎপাত। কার্যত বিনা বাধায় বিদ্যুতের তার কেটেছিল ইঁদুরের দল। আর তাতেই শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লাগে হালং বাংলোয়। সাধারণ পর্যটক থেকে মন্ত্রী-আমলা, স্মৃতির মনিকোঠায় থেকে যাওয়া হালং বাংলা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। কারণ বন্ধ থাকা হলং বাংলোতে কিভাবে আগুন লাগলো তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছিল। এমন কি কোন অন্তর্ঘাত হয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠেছিল।
প্রসঙ্গত ইতিমধ্যেই যে রিপোর্ট এসে জমা পড়েছে তাতে জানা গিয়েছে, হলং বাংলায় ইঁদুরের উৎপাত। ওখানে অনেক ইঁদুর আছে বলেই রিপোর্টে জানা গেছে। ইঁদুর কোনও তার কেটে দিয়ে থাকতে পারে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। আগুন লেগে যাওয়ার পর একের পর এক এসি ফেটে যায় বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকগুলো এসি একসঙ্গে বার্স্ট করে যাওয়ায় মুহূর্তে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। এছাড়াও ৫৭ বছরের পুরনো বাংলোর কাঠ হচ্ছে শুকনো কাঠ, ফলে তা দ্রুত জ্বলে গিয়েছিল। কাঠের বাড়ি জলের হাত থেকে বাঁচাতে যে বার্নিশ বা পালিশ করা হয় তাও আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়াতে সাহায্য করেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতরে থাকা কাঠের হলং বাংলোটিতে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন গোটা বাংলোটিকে গ্রাস করে নেয়। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বনকর্মীরা। তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কাঠের বাংলোর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন তাঁদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। মাদারিহাট থেকে দমকলের দুটো ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালায়। তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। দমকল আধিকারিকদের প্রাথমিক অনুমান ছিল শর্ট সার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ড।
পরবর্তীতে এই ঘটনা প্রসঙ্গে বীরবাহা হাসদা বলেছিলেন, ” হলং যেন প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য। তাই ওখানে কাঠ দিয়েই তৈরি করা হয়েছিল আস্ত বনবাংলো। কাঠের বাংলো, ফলে আগুন নিমেষে ভয়াবহ আকার নেওয়ায় বাংলাকে রক্ষা করতে পারলাম না।” বন দফতরের এক কর্তার কথায়, “এখানকার নৈস্বর্গিক পরিবেশ মানুষকে বারে বারে হাতছানি দিয়ে টেনে আনে। খুব কাছ থেকে প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করার অন্যতম আদর্শ জায়গা এই হলং। প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য বললেও অত্যুক্তি হয় না।”
Discussion about this post