দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। এর আগে লোকসভার সাংসদ হলেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নাতি রাহুল কোনও পদ গ্রহন করেননি। কিন্তু এবারের ঘটনা আলাদা। তাঁর নেতৃত্বে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট ভালো ফল করেছে। ফলে তাঁকেই লোকসভার বিরোধী দলনেতা বাছা হয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, তিনি কী কী ক্ষমতা ভোগ করবেন এই পদে থেকে।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোট আশাতীত ভালো ফল করেছে। পাশাপাশি কংগ্রেসও সেঞ্চুরি করেছে লোকসভা আসনের। এবার কংগ্রেসের হয়ে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি। সোনিয়া গান্ধি অসুস্থ থাকায় এবার লোকসভায় লড়েননি। তাঁর জায়গায় রাহুলই এগিয়ে আসেন। মা সোনিয়া গান্ধির জেতা আসন রায়বেরেলি থেকে এবার ভোটে লড়েন রাহুল। জেতেন বিপুল ভোটে। অপরদিকে, কেরলের ওয়ানাড থেকেও তিনি জেতেন। অবশেষে রায়বেরেলি হাতে রেখে ছেড়ে দিয়েছেন ওয়ানাডে সাংসদ পদ। মঙ্গলবার রাতে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে রাহুলকেই বিরোধী দলনেতা হিসেবে মনোনীত করেন বিরোধী জোটের নেতৃবৃন্দ। বুধবার সংসদে স্পিকার নির্বাচনে তিনিই বিরোধী দলনেতা হিসেবে সামনের সারিতে চলে এলেন। ভোটাভুটির পর ওম বিরলা পুনরায় লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাশেই ছিলেন রাহুল। এখন জানুন, লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল গান্ধি আদতে কি কি সুবিধা পাবেন।
২০১৯ সালে ১৭তম লোকসভায় বিরোধী জোট কম আসন পাওয়ায় বিরোধী দলনেতা হিসেবে যোগ্যতা ছিল না। তবুও সংসদীয় রীতিনীতি মেনে সবচেয়ে বড় বিরোধী দল কংগ্রেসের একজনকে বিরোধী দলনেতা মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। ওই পদে ছিলেন বাংলার প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধূরী। ২০১৪ সালেও বিজেপির দাপটে লোকসভায় সরকারিভাবে কোনও বিরোধী দলনেতা ছিল না। কিন্তু ২০২৪ সালের আবহ আলাদা। এবার কংগ্রেস ১০০টি আসন জিতেছে। পাশাপাশি কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোট ২৩০টির বেশি আসন জিতে বিজেপিকে চাপে ফেলেছে। এবার সরকারিভাবে বিরোধী দলনেতা পেয়েছে সাংসদ। সেই পদে রাহুলের আগমন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এবার আসি বিরোধী দলনেতার কে হন এবং তাঁর ভূমিকা কি থাকে। লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা হলেন এমন একজন সাংসদ যার দল হাউজে সর্বাধিক সংখ্যাগত শক্তি নিয়ে আসে। অর্থাৎ, বিরোধীদের মধ্যে সর্বাধিক আসন পাওয়া রাজনৈতিক দলের মধ্যে একজন বিরোধী দলনেতা হন। মোদ্দা কথায়, লোকসভা বা রাজ্যসভায় মোট আসনের এক দশমাংশ আসন আর্জনকারী দল থেকে এক বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হবেন। সেই হিসেবে লোকসভায় ৫৪৩ আসনের মধ্যে বিরোধী দলনেতার পদ পেতে হলে সেই রাজনৈতিক দলকে অন্তত ৫৫টি আসন পেতে হবে।
- দ্য ইন্ডিয়ান পার্লামেন্ট নামক একটি পুস্তিকা অনুসারে, লোকসভার বিরোধী দলনেতা হলেন ছায়া মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর বিপরীত আসনে তিনি বসেন। কোনও কারণে ক্ষমতাসীন সরকার পদত্যাগ করলে বা ভোটাভুটিতে পরাজিত হলে বিরোধী দলনেতাই প্রশাসনের দায়িত্ব নেবেন। লোকসভার বিরোধী দলনেতা একজন কেন্দ্রীয় পূর্ণ মন্ত্রী সমতুল পদে আসীন থাকেন।
- কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে বিরোধী দলনেতার একটি সুসজ্জিত অফিস থাকে। এবং তাঁকে সরকারি বাংলো দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় পূর্ণমন্ত্রীর সমতুল উচ্চস্তরের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন বিরোধী দলনেতা। পাশাপাশি, বিনামূল্যে বিমান এবং রেলভ্রমণের পাস পেয়ে থাকেন বিরোধী দলনেতা। এছাড়া, সরকারি গাড়ি ব্যবহার, অফিস এবং বাংলো জন্য কর্মচারী পান তিনি। টেলিফোন বিল, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল এবং চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করে ভারত সরকার।
- এছাড়া মাসিক ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বেতন এবং ভাতা হিসেবে পেয়ে থাকেন বিরোধী দলনেতা। এর সঙ্গে রয়েছে, তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে দেখা করতে আসা বিশিষ্ট অতিথিদের সেবা করার জন্য বিশেষ আতিথেয়তা ভাতা। ৪৮টির বেশি দেশে-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের জন্য খরচ পান বিরোধী দলনেতা।
- তবে সরকারিভাবে বিরোধী দলনেতার ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মর্যাদাবলে লোকসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হন। এছাড়াও পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি, এস্টিমেটস কমিটি-সহ বেশ কয়েকটি যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে থাকেন বিরোধী দলনেতা। এছাড়া. লোকসভার বিরোধী দলনেতা সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন, সেন্ট্রাল ইনফরমেশন কমিশন, সিবিআই, এনএইচআরসি এবং লোকপালের মতো বিধিবদ্ধ সংস্থার প্রধানদের নিয়োগের জন্য নির্বাচিত কমিটির সদস্য থাকেন।
Discussion about this post