এপ্রিল থেকে জুন টানা তিনমাস ছিল সমুদ্রে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা। অভিযোগ নিষেধাজ্ঞা উঠতেই সমুদ্র থেকে দেদার ধরে আনা হচ্ছে খোকা ইলিশ। এমনই ছবি ধরা পড়ল নামখানার মৎস্য বন্দরে। অভিযোগ, নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ট্রলার ভরে ভরে ছোট ইলিশ ভিড়ছে পাড়ে। সরকারি নিয়মের নেই কোনও তোয়াক্কা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, এই সময় অগভীর সমুদ্র থেকে ধরা ইলিশগুলির ওজন মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম। যা নিয়ে চিন্তায় মৎস ব্যবসায়ীদের একাংশ।
মাছে ভাতে বাঙালি। আর সেই মাছ যদি ইলিশ মাছ হয়। তাহলে তো কোন কথাই নেই। প্রতি বছর প্রাক বর্ষা থেকেই ইলিশের জন্য মন আকুপাকু করতে শুরু করে। কবে পাতে পড়বে রূপোলি শস্যের সুস্বাদু পদ? ভোজনরসিক বাঙালি সেই অপেক্ষার কোন ইতি নেই। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির বেশ ঘাটতি রয়েছে বাঙলায়। তার জেরে মৎস্যজীবীদের জালে ইলিশ মাছ উঠছে কম। তবে বাজারে যে ইলিশের চাহিদার কোন খামতি নেই। আর চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ছোট ছোট ইলিশ শিকার চলছে দেদার। গভীর সমুদ্র থেকে ট্রলার ফিরছে ঘাটে ঘাটে। ট্রলার থেকে ক্যারেট বন্দী অবস্থায় নামছে রাশি রাশি সেই খোকা ইলিশ। কিন্তু এই সময় সমুদ্রে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে রয়েছে বেশ কিছু সরকারি নিষেধাজ্ঞা।
নিষেধাজ্ঞা ও কারণ
সরকারি নিষেধাজ্ঞা বলছে, সমুদ্রে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। আসলে বর্ষাকালে গভীর সমুদ্র থেকে ডিম পাড়তে মিষ্টি জলের খোঁজে নদীতে প্রবেশ করে ইলিশ। এই সময় ইলিশ ধরলে কমে যেতে পারে ইলিশের জোগান। তাই এপ্রিল, মে এবং জুন মাস সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর কিছুদিন ইলিশ মাছ ধরার কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হয় মৎসজীবীদের। ৫০০ গ্রাম ওজনের নীচে ইলিশ ধরা যায় না। কারণ ছোট ইলিশ ধরলে বড় ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কিন্তু এই নির্দেশিকা কোনও ভাবেই তোয়াক্কা করছেন না এক শ্রেণির মৎসজীবী।
জানা যায়, বর্ষাকালে সমুদ্র থেকে নদীর জলে ইলিশ ডিম পাড়তে আসে। সেই ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার পরে সেগুলি কয়েক মাসের মধ্যেই বেড়ে গিয়ে ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের হয়। ছোট অবস্থায় তারা সমুদ্রে ফিরতে পারে না। নদীতেই থেকে যায়। ছোট ইলিশ ধরা হলে ইলিশের সংখ্যা কমতে বাধ্য। তাই ছোট ইলিশ ধরা বা বিক্রি করা নিষিদ্ধ। যেখানে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ সেখানে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ইলিশ ধরা চলছে দেদার। আকারে ছোট গায়ে মাংসে পাতলা এই ইলিশে বাজার এখন ভরে উঠছে। যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ী মহল।
কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক, বিজন মাইতি বলেন, বার বার না করা সত্ত্বেও বন্ধ করা যাচ্ছে না ছোট ইলিশ মাছ ধরা। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক মৎস্য দফতর। কাকদ্বীপ মৎস বন্দরের ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্যারেট ভর্তি খোকা ইলিশ চলে যাচ্ছে ডায়মন্ড হারবার ও শিয়ালদহের পাইকারি বাজারে। এক একটি ট্রলার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ক্যারেট করে ছোট ইলিশ মাছ ধরে আনছে। এখন প্রশ্ন মাছ ধরার ক্ষেত্রে জালের রকমফের আছে। ছোট মাছ যে জালে আটকাবে। বড় মাছের ক্ষেত্রে অন্য জালের প্রয়োজন। মৎস্যজীবী ট্রলার গুলিতে ৯০ সেন্টিমিটারের থেকে ছোটো ফাঁসের জাল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। তার পরেও সেই জাল কি করে ব্যবহার করছেন তাঁরা। পুরো ঘটনার পেছনে একটা বিষয় উঠে আসছে তা হল প্রশাসনিক নজরদারির অভাব।
Discussion about this post