আজকের দিনে যে কোনও পণ্যের বিপনন বা ব্র্যান্ডিং হল আসল। যে যত দুর্দান্ত ব্র্যান্ডিং করতে পারবে, তার পণ্য তত বিক্রি হবে। কিন্ত একটি পণ্যের ব্র্যান্ডিং বিগত ৫০ বছরেও পরিবর্তন হয়নি। অন্তত তিনটি প্রজন্ম ওই একই প্যাকেট দেখে আসছে। পাড়ার মোড়ের প্রতিটি দোকানেই প্রায় দেখা যায় নীল পঙের প্যাকেটের একটি চেন ঝুলছে। যা দেখে এক ঝলকেই ক্রেতারা চিনে ফেলেন সেটি আসলে চুটকি। মাউথ ফ্রেশনারের বাজারে এক এবং অদ্বিতীয় নাম। সেই ১৯৭০ সাল থেকে মাউথ ফ্রেশনার চুটকির প্যাকেটের বহিরঙ্গে কোনও পরিবর্তন হয়নি। যদিও কালের নিময়ে দাম এবং সাইজে পরিবর্তন হয়েছে। সেই নীল রঙের প্যাকেটের মাঝে একটি ডিম্বাকৃতি অংশে এক মহিলার ছবি। সেই ছবির কোনও পরিবর্তন হয়নি বিগত ৫৪ বছরে। ফলে স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, কে এই মহিলা? যে দশকের পর দশক চুটকির প্যাকেটে তিনি রয়ে গিয়েছেন।
১৯৭০ সালে প্রথম বাজারে এসেছিল মাউথ ফ্রেশনার চুটকি। সেই সময়ই নীল রঙের চুটকির প্যাকেটে যে মহিলার ছবি ছাপা হয়েছিল। আজ পাঁচ দশক পরও তা পরিবর্তন করেনি সংস্থা। চুটকির প্যাকেটের গায়ে যে মহিলার ছবি ছাপা রয়েছে, তাঁর নাম অনিতা ডামেলো। কিন্তু যাকে নিয়ে এত কৌতুহল, কেউ জানে না তিনি এখন কোথায়। তবে এটা জানা যায়, ৭০-এর দশকে অনিতা ডামেলো মডেলিং জগতে প্রবেশ করেন। তিনি সেই সময় মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগীতাতেও অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু সাফল্য পাননি। এরপর মডেলিং পেশায় আসেন। কিন্তু সেখানেও তিনি সাফল্যের মুখ দেখেননি। ফলে বাধ্য হয়েই ছোটখাটো বিজ্ঞাপণী ফটোশ্যুটে কাজ করা শুরু করেন অনিতা। এই সময়ই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় চুটকির হাত ধরে। বাজারে নতুন মাউথ ফ্রেশনার লঞ্চ করার আগে চুটকি কোম্পানি একটি অডিশনের আয়োজন করে। তাঁদের নতুন মাউথ ফ্রেশনারের প্যাকেটে কভার ফটোর জন্য একজন মডেলকে খুঁঝছিল কোম্পানি। সেই অডিশনেই হাতে চাঁদ পেয়ে যান অনিতা ডামেলো। তাঁকেই বাছা হয় চুটকি কোম্পানির নতুন মাউথ ফ্রেশনারের কভার ফটোর জন্য।
আর চুটকি মাউথ ফ্রেশনারও বাজারে হিট করে যায়। হু হু করে বাড়তে থাকে বিক্রি। ফলে মডেল অনিতার কেরিয়ারও হু হু করে বাড়তে থাকে। এক অখ্যাত মডেল থেকে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান অনিতা। ফলে আরও বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনী শ্যুটে কাজ পান তিনি। যদিও চুটকির মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে তাঁর ছবি বিগত ৫০ বছর ধরে রয়ে যাওয়ার ফলে তাঁর মুখ সকলেই কম-বেশি চেনেন। কিন্তু তাঁর নাম খুব অল্প লোকই জানেন। জানা যায়, চুটকি গার্ল হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার পর তিনি এক ব্রাজিলিয়ান এনআরআই-কে বিয়ে করে ব্রাজিল চলে যান। তিনি আদৌ আজ বেঁচে আছেন কিনা, সেটা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে চুটকি মাউথ ফ্রেশনারের প্যাকেটে আজীবন বেঁচে থাকবেন মডেল অনিতা ডামেলো।
Discussion about this post