বৃষ্টি আসলেই জল যন্ত্রণায় কাতর হয় তিলোত্তমা কলকাতা। বিভিন্ন এলাকায় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। এই বারের পরিস্থিতি ঠিক কি একবার দেখে নেব। উত্তর কলকাতার অলিগলি হোক বা দক্ষিণ কলকাতার বেহালা। বৃষ্টির জলে জলবন্দি অবস্থা হয় কলকাতার বহু জায়গার। সর্বত্র নোংরা জলে ছয়লাপ। চর্মরোগ থেকে শুরু করে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া। বর্ষা আসতেই ভুরু কুঁচকে ওঠে কলকাতাবাসীর। কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থার সমস্যা দীর্ঘদিনের। একবার জল জমলে কবে সেই জমা জল থেকে মুক্তি মিলবে তা কেউ ঠাহর করতে পারে না।
কিন্তু কেন এত জল যন্ত্রণা কলকাতায়?
জানা যায় কলকাতা গড়ে উঠেছিল জলা জায়গা বুজিয়ে। কোন এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে সকল স্থান বর্তমানে শিয়ালদহ ও বউবাজার বলে প্রসিদ্ধ, সে সমস্ত স্থান পর্যন্ত লবণ জলের হ্রদটি বিস্তৃত ছিল। জোয়ার-ভাটার টানে নোনাজলের বিদ্যাধরী নদীর প্লাবনভূমি হিসাবে এই জলা অঞ্চল কাজ করত। অর্থাৎ জল উপচে এলে তা ধারণ করত এই জমি। ধীরে ধীরে এইসব বুজিয়ে ঘর-বাড়ি গড়ে তোলা হয়। আর এই বিচ্ছিন্নতাই সব কিছুর জন্য দায়ী।
কলকাতার জলবন্দির অবস্থার কথা ভেবে কর্পোরেশন এক নয়া উদ্যোগ আনতে চলেছে। যেখানে কম্পিউটারের এক ক্লিকেই বা স্মার্টফোনে ক্লিক করলেই জেনে যাবেন কত সময় লাগতে পারে জমা জল থেকে মুক্তি পেতে । কলকাতা কর্পোরেশনের নিকাশি বিভাগ তৈরি করেছে মাটির তলার নিকাশি লাইনের ডিজিটাল ম্যাপ । এবার তার সঙ্গেই যুক্ত হয়ে যাচ্ছে কলকাতার প্রতিটি খাল ও পাম্পিং স্টেশনের অবস্থান । কোন পাম্পিং স্টেশনে কতগুলো পাম্প কাজ করছে, কত জল কত সময়ের মধ্যে খালে ফেলছে খুঁটিনাটি তথ্য বিস্তারিত জানা যাবে। বর্ষার জমা জলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ে ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। তবে পরিসংখ্যান বলছে চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ অনেকটাই কম। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা দাবি করে গত বছরের তুলনায় এই বছর ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ৩৭ শতাংশ কমেছে।
পরিসংখ্যান কী বলছে?
- গত বছর এই সময়ে কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২০
- ৪ জুলাই পর্যন্ত আসা রিপোর্টে সেই সংখ্যা ১৪৬
- গত জুলাই পর্যন্ত কলকাতায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২
- এ বছর ১৪ ই জুলাই পর্যন্ত ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬৩
মোটের উপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। তবে জমা জলের রোগ থেকে কবে মুক্ত হবে কলকাতাবাসী কিংবা আদৌ মুক্ত হবেন কিনা তা এখন বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। অপরদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হোক বা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, কেউই নিজেদের কাজের প্রশংসা করতে ছাড়েন না।
Discussion about this post