উত্তপ্ত বাংলাদেশ। সোমবারই দেশ ছাড়া হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সে দেশের জাতীয় সাংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এখন সেনা শাসনে চলছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে আপাতত ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী। অপরদিকে অশান্ত বাংলাদেশে আটকে বহু ভারতীয় পড়ুয়া, পর্যটক এবং কর্মসূত্রে যাওয়া ভারতীয় নাগরিক। এই আবহেই মঙ্গলবার সর্বদল বৈঠক ডেকেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধিন কেন্দ্রীয় সরকার। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি ভারতের বিদেশনীতি কী হতে চলেছে সেটা নিয়েও আলোচনা করলেন। পরে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সংসদেও বিবৃতি দিয়েছেন। সংসদে তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খুব অল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার আবেদন করেছিলেন। তবে তিনি মূলত উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশে আটকে থআকা প্রায় ১৯ হাজার ভারতীয়দের নিয়ে। পাশাপাশি সে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিদেশমন্ত্রী।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দরা বিপন্ন বোধ করছেন। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। ইতিমধ্যেই প্রাণ হতে করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে এসেছেন বেশ কয়েকজন। মঙ্গলবারই বালুরঘাটের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে এসে পৌঁছলেন কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে একজন গামছা পড়েই পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ, ভারতে প্রবেশের পর কেঁদে ফেললেন বালুরঘাটের বাসিন্দা পার্থ অধিকারী এবং তাঁর এক শিষ্য। তাঁরা বাংলাদেশের শিবগঞ্জে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু গোলমালের জেরে আটকে পড়েছিলেন। পার্থবাবুর দাবি, রবিবার রাতেই তাঁরা যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে হামলা চালানো হয়। কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচেন তাঁরা। এমনকি কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও স্থানীয় যানবাহনে সীমান্ত পর্যন্ত এসেছেন তাঁরা। পড়নে গামছা এবং একটি ফতুয়া পড়েই তিনি বাংলাদেশ থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে ফেরেন।
ইটাহারের বাসিন্দা কনক দাস বাংলাদেশ গিয়েছিলেন একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। তিনিও কোনও রকমে লুকিয়ে নদীর পারে রাত কাটিয়ে মঙ্গলবার দেশে ফিরলেন। তাঁর মুখেও শোনা গেল ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। অপরদিকে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তেই সে দেশের আওয়ামী লিগের কর্মীদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটছে। চলছে অকথ্য নির্যাতন। এমনই দাবি করলেন প্রাণ হাতে ভারতে পালিয়ে আসা আওয়ামী লিগের নেতা বিশ্বজিৎ সারা। চোখে মুখে তীব্র আতঙ্ক নিয়ে কোনও মতে তিনি মঙ্গলবার বনগাঁ সীমান্তে এসে পৌঁছন। হাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে তাঁর দাবি, আওয়ামী লিগ করার জন্য তাঁর নামে হুলিয়া জারি হয়েছে। তাঁই লুকিয়ে ভারতে পালিয়ে এলেন তিনি। তাঁর আশঙ্কা বাংলাদেশে থাকলে এতক্ষণে খুন হয়ে যেতে হতো। এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের হিন্দুরা যাতে নিরাপদে থাকেন, সে দেশে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের ওপর যাতে কোনও রকম হামলা না হয় সেটা নিশ্চিত করতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে। পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতের হাইকমিশন এবং চারটি উপ হাইকমিশনের কর্মী-আধিকারিকদের হাই অ্যালার্টে থাকতে বলা হয়েছে। যাতে কেউ কোনও রকম সাহায্য চাইলে পান। এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
Discussion about this post