চাকরি ক্ষেত্রে কোটা বাতিলের দাবি আন্দোলন। আর সেই আন্দোলন চলল একমাসের বেশি সময় ধরে। বিভিন্ন সংঘর্ষে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। অবশেষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে প্রায় সমস্ত কোটা বাতিল হল, মেধার ভিত্তিতেই সিংহভাগ চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হল। ফলে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের আন্দোলন থামার দিকে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এর পিছনেই যে এক নিখুঁত ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছিল তার খোঁজ ঘ্রুণাক্ষরেও পাননি শেখ হাসিনা। ফলে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই ফের মাথা চাড়া দিল ছাত্র আন্দোলন। এবার দাবি এক দফা, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আর মাত্র দিন কয়েকের ব্যবধানেই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হল। আর এতে পূর্ণ মদত দিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। অনেকটা সিনেমার প্লটের মতো সাজানো। তবে পরবর্তী ছাত্র আন্দোলনের একটাই উদ্দেশ্য ছিল যেন তেন প্রকারেণ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞমহলের দাবি, এই ঘটনার পিছনে সরাসরি মদত দিয়েছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। আর ষড়যন্ত্রের মাথা চিন।
বিগত কয়েকটি বছর ধরেই ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে দেখা যাচ্ছিল বাংলাদেশীদের মনে ভারত বিরোধী মনোভাব। প্রতি পদেই ভারত সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য এবং ভিডিওয় ভরে উঠছিল ফেসবুক-টুইটারের দেওয়াল। বিশেষ করে ক্রিকেট বিশ্বকাপে তা ভয়ানক আকার নিয়েছিল। অনেকেই এটা লক্ষ্য করে থাকবেন। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে এই ধরণের ভারত বিরোধী প্রচারের মদত আসছিল বিদেশ থেকে। অপরদিকে, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগ সরকারের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুসম্পর্ক নিয়েও চর্চা চলছিল। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক লেনদেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়েছিল প্রতিবেশী এই দুই দেশের রাষ্ট্রনায়কদের সময়কালেই। যা চক্ষুশূল হয়ে উঠছিল পাকিস্তান ও চিনের। ফলে এই দুই দেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে যে কোনও মূল্যে ভারত বিরোধী সরকার গড়া।
সম্প্রতি বাংলাদেশের মোংলা বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব হাতে পেয়েছিল ভারত। যা দক্ষিণ এশিয়ার জলবাণিজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে বাংলাদেশ যেমন লাভবান হতো, তেমনই ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিও বৈদশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পেত। আবার বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ট্রেন চালানোর চুক্তিও সম্পন্ন করেছিল ভারত সরকার। তৃতীয় মোদি সরকার গঠনের সময়ই শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হয়ে ভারতে আসেন। সেই সময়ই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রেল ট্রানজিট চুক্তি হয়। এর ফলে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ভারতের ট্রেন যাতায়াতের সুবিধা হতো। ফলে অনেকটা কম সময়ে কলকাতা থেকে আগরতলায় পৌঁছতো ট্রেন। এই সমস্ত বিষয় ভালো চোখে দেখছিল না চিন এবং পাকিস্তান। বিশেষ করে মোংলা বন্দর হাতছাড়া হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছিল বেজিং। ফলে হাসিনা সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্য চিনের সাহায্যে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা বড় ষড়যন্ত্র করেছে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এবং কূটনৈতিক মহলের একাংশ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, বাংলাদেশজুড়ে যে ব্যাপক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটল তার নেপথ্যে জামায়তে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের শুরুতেই বিশাল অঙ্কের আর্থিক সাহায্য এসেছিল বাংলাদেশের জামায়তে ইসলামের হাতে। আর এই টাকা এসেছিল বাংলাদেশে কাজ করা বিভিন্ন চিনা সংস্থাগুলির মাধ্যমে। আর জামাতের সঙ্গে যোগসাজস রেথে গোটা পরিকল্পনা রুপায়ন করেছে পাকিস্তানের আইএসআই গোয়েন্দারা। শেখ হাসিনার প্রতি বেজিংয়ের অসোন্তোষের মূল কারণ হল ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিকাঠামো উন্নয়ের চুক্তি। আগে বাংলাদেশে সেতু নির্মান থেকে শুরু করে রেলপথ নির্মানের বহু কাজ করতো চিনা সংস্থাগুলি। নরেন্দ্র মোদি জমানায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতি হওয়ায়, বাংলাদেশ ভারতকেই পরিকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ পদ্মা সেতু। ফলে চিনের সংস্থাগুলি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে শুরু করে। এরপরই ঢাকার উপর চাপ বাড়াতে শুরু বেজিং। কিন্তু মুজিবকন্যা সেই চাপ উপেক্ষা করেই বন্ধু ভারতের সঙ্গে একের পর এক চুক্তি সাক্ষর করেন। ফলে চিনের রোষে পড়তে হল শেখ হাসিনাকে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এরপরই পাকিস্তানের মাধ্যমে বাংলাদেশে জামায়তে ইসলামের হাত ধরে হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে টাকা ঢালা হয়। ফলে ছাত্র আন্দোলন হয়ে দাঁড়ায় হাসিনা হঠাও আন্দোলন। যার পরিনতি হাসিনার দেশত্যাগ এবং বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবর রহমানের মূর্তি ধ্বংস।
Discussion about this post