আর জি কর কাণ্ড নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। যা নিয়ে সিঁদূরে মেঘ দেছেছিলেন আইনজীবী মহল। মঙ্গলবার আদালত খুলতেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির তিন সদস্যের বেঞ্চ আর জি কর নিয়ে সবপক্ষের বক্তব্য শুনলেন। আর শুনানির পরতে পরতে সুপ্রিম প্রশ্নবানে বিদ্ধ হল রাজ্য সরকার।
আর জি কর হাসপাতাল কর্তপক্ষ কেন প্রথমেই এফআইআর দায়ের করেনি?
প্রথম এফআইআরে খুনের উল্লেখ ছিল কি না?
বেলা ১১.৪৫ মিনিটে প্রথম এফআইআর, তার আগে অঘ্যক্ষ কী করছিলেন?
প্রথমে কেন আত্মহত্যার কথা জানানো হয়েছিল?
কেন নির্যাতিতার নাম ও ছবি প্রকাশ্যে এল?
প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা কি ছিল?
অধ্যক্ষের ইস্তফার পর কী ভাবে অন্যত্র সমপদে নিয়োগ হলেন?
স্বাধীনতা দিবসের আগের মুহুর্তে কী ভাবে হাসপাতাল ভাঙচুর হল?
পুলিশ ওখানে কী করছিল?
একের পর এক প্রশ্ন উড়ে এল প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ আর জি কর কাণ্ড নিয়ে মামলা শোনেন। শুনানি শেষে আগামী ২২ তারিখ রাজ্য সরকারের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট, সেই সঙ্গে সিবিআইয়ের কাছে তদন্তের স্টাটাস রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার ফের শুনানি হবে।
এদিন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের হয়ে সাওয়াল করেন কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংভির মতো দুঁদে আইনজীবীরা। কিন্তু শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রশ্নবানের মুখে তাঁদেরও বেশ অসহায় দেখিয়েছে। শুনানির শুরু থেকেই একের পর এক কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে আইনজীবীদের। বিচারপতি পারদিওয়ালা জানতে চান, কার অভিযোগের ভিত্তিতে এবং কখন প্রথম এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল? জবাবে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, মৃতা চিকিৎসকের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রথম এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। পরে অধ্যক্ষও অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এরপরই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এফআইআর দায়ের হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃতদেহ পরিবারের হাতে দিয়ে দিলেন? জবাবে রাজ্যের আইনজীবী জানান, আর জি করের পড়ুয়া চিকিৎসকদের দাবি মেনে, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত হয়েছে, গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। ওই দিন বিকেল চারটে নাগাদ দেহ হস্তান্তর করা হয়। এরপরই প্রধান বিচারপতি জানতে চান, তাহলে প্রথম অভিযোগ কখন দায়ের হয়? রাজ্যের আইনজীবী জানান, বেলা ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ এফআইআর দায়ের হয়।
এরপরই বিশ্মিত প্রধান বিচারপতি জানতে চান, এফআইআর দায়ের করতে এত দেরি কেন? হাসপাতালের অধ্যক্ষ, সুপার কী করছিলেন? অথচ বিকেলে হওয়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হল এটা খুন! এদিন সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। রাজ্যের আইনজীবীর কাছে তিনি জানতে চান, অধ্যক্ষকে সাসপেন্ড করা হয়েছে কি না। জবাবে কপিল সিব্বল জানান, সন্দীপ ঘোষকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। আন্দোলন চলাকালীন হাসপাতালে এতবড় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে গেল, পুলিশ কী করছিল, পুলিশ কি হাসপাতাল ভাঙচুরের অনুমতি দিয়েছিল? এরপরই প্রধান বিচারপতি রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেন, হাসপাতাল ভাঙচুরের জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের কাছেও তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী বৃহস্পতিবারই দুটি রিপোর্ট শীর্ষ আদালতে জমা দিতে হবে। ওই দিনই হবে শুনানি। সুপ্রিম কোর্টের এদিনের শুনানি নিয়ে রাজ্যের সর্বস্তরে কৌতুহল ছিল। এদিনের সুপ্রিম আদেশের পর আর জি কর হাসপাতালের আন্দোলনরত পড়ুয়ারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
Discussion about this post