বাংলাদেশের পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছিলেন গণঅভ্যুত্থানের জেরে। এরপরই তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসেন। বাংলাদেশে এখন নতুন তদারকি সরকার গঠিত হয়েছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুস সেই তদারকি সরকারের প্রধান। কিন্তু চরম আর্থিক সঙ্কটে চলা বাংলাদেশের হাল কী তিনি ফেরাতে পারবেন? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের একটি অংশ ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। যদিও এই বন্যার জন্য ভারতকেই দায়ী করছেন বাংলাদেশের অনেকে। এরমধ্যেই আরেকটি খবর সামনে এল। যা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের নবনিযুক্ত গভর্নর এহসান এইচ মানসুর। তিনি জানান, ভারতের সংস্থা আদানি পাওয়ার প্রায় ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি মার্কিন ডলার পায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে। যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যে এখন প্রবল চাপে আছে, সেটা প্রকাশ্যেই স্বীকার করে নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর।
ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থা আদানি পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদপত্র প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ সালে ভারত প্রায় ১০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের বিদ্যুৎ রফতানি করেছে বাংলাদেশে। যার বেশিরভাগটাই আদানি পাওয়ার লিমিটেডের। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় আদানি গ্রুপ একটি পাওয়াপ প্ল্যান্ট তৈরি করেছে। যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১,৬০০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে ৮০০ মেগাওয়াট বাংলাদেশেই রফতানি করা হয়। ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আদানি পাওয়ার বাংলাদেশকে মোট ১,১৯৩ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ রফতানি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সে দেশে ছাত্র আন্দোলন বড় আকার নিতে শুরু করার পর আর বিদ্যুতের মূল্য দেয়নি আদানি পাওয়ারকে। ফলে বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার। যদিও এই বিষয়ে আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেওয়া বন্ধ করা হয়নি। এমনকি এই বিষয়ে কোনও বিবৃতিও জারি করেনি গৌতম আদানির সংস্থা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের নবনিযুক্ত গভর্নর দাবি করেছেন, বাংলাদেশে যে ভয়াবহ আর্থিক সংকট চলছে, তাতে আগামীদিনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যহত হতে পারে।
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এহসান এইচ মানসুর বলেন, আমরা যদি টাকা দিতে না পারি, তাহলে তাঁরা আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে দেবে। তাঁর আরও বক্তব্য, বাংলাদেশ এখন চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বার্তা খুব স্পষ্ট, আমাদের টাকার দরকার। আমরা সব বকেয়া মিটিয়ে দিতে চাই। এই বক্তব্য থেকে পরিস্কার, চরম আর্থিক সংকটে ভোগা বাংলাদেশ আদানি পাওয়ারকে দ্রুত বকেয়া মেটাতে পারবে না। এমনকি দ্রুত টাকা না মেটালে বকেয়া আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে আদানি পাওয়ার কতদিন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে, সেটাও একটা প্রশ্ন। অপরদিকে, ভারত সরকার সম্প্রতি ২০১৮ সালের বিদ্যুৎ আমদানি-রফতানি নীতি সংশোধন করেছে। বিদেশে বিদ্যুৎ রফতানির যে বিধান ছিল, মূলত তা সংশোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ, আদানি পাওয়ার যাতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংযোগের বরাত হারায় অথবা বকেয়া না পেয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে না পারে তবে তাঁরা ভারতেই সেই বাড়তি বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, আদানি গ্রুপের কথা মাথায় রেখেই এই সংশোধন করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এখন দেখার আদানি পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশের বকেয়া টাকা না পেয়ে কি অবস্থান নেয়। তবে যদি আদানি বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে, তবে নতুন করে আঁধারে ডুববে বাংলাদেশ।
Discussion about this post