বাংলাদেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, সীমান্ত পেরিয়ে এপার বাংলায় ঢুকছে জঙ্গিরা। আর এবারে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সক্রিয়তার প্রমান প্রকাশ্যে এল। বিভিন্ন এলাকায় মোবাইলে সার্চ করলেই উঠে আসছে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সক্রিয়তার রূপ।
জানা গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ সহ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় মোবাইলে সার্চ করলেই উঠে আসছে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক এই সক্রিয়তার রূপ। ইতিমধ্যেই ক্যানিং থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এক জঙ্গিকে।
তারপর শুরু হয়েছে পুলিশি জেরা। পুলিশ সূত্রে খবর ওই জঙ্গি স্বীকার করে নিয়েছে যে হাসনাবাদ সহ বিভিন্ন এলাকায় নদীপথে নজরদারি কম থাকায়, বাংলাদেশে যাতায়াতের একটা রাস্তা হিসাবে এই এলাকাকেই বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা।
ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের অনুমান, বাংলাদেশী মোবাইল নেটওয়ার্ক সক্রিয় করে সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘাঁটি স্থাপন করে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখত ওপার বাংলায় থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে।
সীমান্ত পেরোলেও ভারতীয় নেটওয়ার্কের সিগন্যাল পাওয়া যায়। এই ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়েই দিনে দিনে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাড়ছে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য। সবই জানেন বিএসএফের তদন্তকারীরা। তবে তারা জানাচ্ছেন দুষ্কৃতীদের গতিবিধি নজরে রাখা কার্যত অসম্ভব।
কড়া নজরদারি। দিনরাত টহল। সীমান্তে জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে তৎপর বিএসএফ। কিন্তু, জঙ্গি ও চোরাচালানকারীদের ফোন ট্র্যাক করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কারণ, ভারতের সীমান্তে বসে বাংলাদেশের সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ-বাংলাদেশ সীমান্তে এই বাংলাদেশের সিম কার্ড ব্যবহারই এখন মাথাব্যথার কারণ গোয়েন্দাদের।
সাইবার বিশেষজ্ঞ অমলকান্তি চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘অন্য দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক ট্র্যাক করা অসুবিধাজনক। বিএসএফ বা গোয়েন্দাদের কাছে সেই পরিকাঠামো না-থাকারই কথা। ফলে এর সুযোগ নেয় অপরাধীরা। নিজেদের মধ্যে তারা তথ্য আদানপ্রদান করে। ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ পারের অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মগজধোলাইও করা হয়। এ ভাবেই তো সীমান্তের গ্রামগুলিতে জঙ্গি সংগঠনের জাল ছড়িয়ে পড়ে।
মুর্শিদাবাদ থেকে নদিয়া— প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার আত্মর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে জলপথ প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা। এর মধ্যে কাঁটাতার নেই প্রায় ২০ শতাংশ জায়গায়। বিএসএফ সূত্রে খবর, কাঁটাতারহীন ওই সব এলাকাই অপরাধচক্রের স্বর্গরাজ্য। সেখানে অন্য দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ বা তথ্য আদানপ্রদান করে থাকে দুই দেশের দুষ্কৃতীরা।
বিএসএফের সাইবার বিভাগের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের একাধিক মোবাইল পরিষেবা দেওয়া সংস্থার সিগন্যাল কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। মোবাইলের ‘সেটিংস’-এ ‘ম্যানুয়াল নেটওয়ার্ক’-এ গেলেই বাংলাদেশি সিগন্যাল বেছে নেওয়া যায়। মোবাইলে বাংলাদেশি সিমকার্ড থাকলেই করা যায় তা। এ পারের দুষ্কৃতীরা মোবাইল নেটওয়ার্কের এই সুবিধা কাজে লাগায়। একই ভাবে ও পারের দুষ্কৃতীরাও ভারতীয় সিমকার্ড ব্যবহার করে এ পারে আত্মগোপন করে থাকে। দু’দেশের দুষ্কৃতীরা ভিন্দেশি সিমকার্ড ব্যবহার করায় তাদের গতিবিধি নজরে রাখতে যে হিমশিম খেতে হয় সাইবার গোয়েন্দাদের
গোটা ঘটনায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গোয়েন্দা বাহিনীর কপালে। কারণ জঙ্গিরা বাংলাদেশী মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে নাশকতার ছক কোশলে তা নজরে আনা দুঃসাধ্য হয়ে যাবে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে, অবিলম্বে ভারতের মাটি থেকে বাংলাদেশি মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যবহার উৎখাত করার দাবিও তুলেছেন তারা।
Discussion about this post