বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তথাকথিত বৈঠকের পর থেকেই পরিস্থিতি আচমকা পাল্টাতে শুরু করেছে। যেখানে মনে করা হয়েছিল, দুই প্রতিবেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথমবার বৈঠকের পর সম্পর্কে গতি আসবে। কিন্তু হল ঠিক উল্টো। আমরা দেখলাম, গত ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডে সাক্ষাৎ হয়েছিল মোদি ও ইউনূসের। তার চার পাঁচ দিনের মাথায় ভারত নিল এক কঠোর সিদ্ধান্ত। ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা একতরফা ভাবেই বাতিল করলো ভারত। এতে বাংলাদেশের বৈদশিক বাণিজ্য জোরদার ধাক্কা খাবে বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ ইউরোপ, আমেরিকা হোক বা আরব দেশগুলিতে বাণিজ্যর জন্য বাংলাদেশ ভারতের সমুদ্র বন্দর বা বিমানবন্দর ব্যবহার করতো। বিশেষ করে কলকাতা হলদিয়া বা পারাদ্বীপ সমুদ্র বন্দর আবার কলকাতা বিমানবন্দর। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় বড় চালান কলকাতা বিমান বন্দরের কার্গো টার্মিনাল দিয়েই ইউরোপ আমেরিকায় পাঠাতেন সে দেশের রফতানিকারকরা। এবার তা বন্ধ হল। সেই সঙ্গে চাপে পড়ল মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের তদারকি সরকার।
এবার যা জানা যাচ্ছে, সেটা আরও বড় কিছু হওয়ার ইঙ্গিত। শিলিগুড়ি করিডোর বা ভারতের চিকেন নেক নামে খ্যাত সেই সরু জায়গায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৎপরতা আচমকা বেড়ে গিয়েছে। যদিও গত বছরের ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনার পতনের পরই ভারত বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে বিপুল সৈন্য মোতায়েন করেছিল। বিগত ছয়-সাত মাসে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া একাধিক এলাকায় সৈন্য মহড়া দিয়েছে ভারত। কয়েকটা বিশেষ মহড়া হয়েছে স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীর যৌথভাবে। এবার জানা যাচ্ছে, শিলিগুড়ি করিডোর লাগোয়া অঞ্চলে ভারত এস৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস মোতায়েন করেছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে আকাশ এয়ার ডিফেন্স মিশাইল। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই এলাকায় এই ধরণের অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস প্রতিস্থাপণ করার অর্থ হল চিনকে বার্তা দেওয়া। মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চিন সফরকালীন ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্যের জেরেই ভারত বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করল। ইউনূস চিনকে আহ্বান করেছিলেন সেভেন সিস্টার্সে তাঁদের অর্থনীতি প্রসারিত করে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের। মুহাম্মদ ইউনূসের ইঙ্গিতে একদিকে যেমন ছিল ভারতের সেভেন সিস্টার্স, অন্যদিকে তেমন রয়েছে লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি। চিনের মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি চিনের প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানান পরিত্যাক্ত লালমনিরহাট বিমানঘাঁটিতে এয়ারবেস তৈরির। যা ভারতের কাছে একটা বড় হুমকি হতে পারে। কারণ, শিসিগুড়ি করিডোর থেকে লালমনিরহাট মাত্র দেড়শো কিলোমিটার দূরে। বলা যায় একেবারে নাকের ডগায় চিনকে আহ্বান জানাচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস। লালমনিরহাটে যদি চিন নিজেদের এয়ারবেস তৈরি করে, আবার মোংলা বা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের নামে যদি সেখানেও একটি নৌঘাঁটি তৈরি করে নেয় চিন, তাহলে তা ভারতের পক্ষে খুব একটা সুখকর হবে না। সেই কারণেই শিলিগুড়ি করিডোর লাগোয়া অঞ্চলে ভারত এস৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস, আকাশ এয়ার ডিফেন্স মিশাইল, ব্রক্ষ্মোস মিশাইল-সহ হেভি টি-৯০ ট্যাঙ্ক মোতায়েন করা শুরু করে দিয়েছে। পাশাপাশি হাসিমারা বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন রয়েছে পুরো এক স্কোয়ার্ডন রাফায়েল যুদ্ধবিমান। অর্থাৎ হাসিমারা এই মুহূর্তে রয়েছে ১৮টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান। যা প্রতিনিয়ত উড়ান ভরছে হাসিমারা থেকে এবং শিলিগুড়ি করিডোরে নজরদারি চালাচ্ছে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা যদিও বলছেন, ভারত চিকেন নেকের সুরক্ষা আরও জোরদার করতেই এই ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু জানা যাচ্ছে, বিগত একমাসের বেশি সময় ধরে শিলিগুড়ির সুকনা এলাকায় ত্রিশক্তি সৈন্যঘাঁটিতে পুরো বাহিনীকে হাই এলার্টে রাখা হয়েছে। ফলে আগামীদিনে ভারত কি বাংলাদেশে বড় ধরণের কোনও অভিযানে নামতে চলেছে? প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ দাবি করছেন, চিকেন নেক নিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবার করা উচিৎ। এটাই প্রকৃত সময়। বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের একটা বড় অংশ নিজেদের দখলে নিলেই চিকেন নেক বড় হয়ে চিকেন চেস্ট হয়ে যাবে। অন্যদিকে ল্যান্ডলক সেভেন সিস্টার্সকে সমুদ্র বন্দর উপহার দিতে চট্টগ্রামকে ভারতের মধ্যে ঢুকিয়ে নেওয়ার আবেদন করছেন অনেকেই। ফলে আগামীদিনে যদি ভারতের সেভেন সিস্টার্স আরও দুই নতুন সিস্টার্স পায়, তাহলেও অবাক হওয়ার কোনও কারণ নেই।
Discussion about this post