৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই নিজের প্রতিশ্রুতিগুলি রাখলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু করলেন এক নতুন অধ্যায়। দায়িত্ব পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দেশজুড়ে এক গুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করলেন তিনি। সেই সঙ্গে বাতিল করলেন জো বাইডেন জমানার একগুচ্ছ আইন। বোঝাই যাচ্ছে অনেকটা অগ্রাসী নীতিতে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন দেখার, দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে তাঁর নীতি কি হতে চলেছে। প্রচার পর্ব থেকেই ট্রাম্প দাবি করছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইদানিং যত সমস্যা তৈরি হয়েছে তা অভিবাসন ঘিরে। আমেরিকায় গত কয়েক বছর ধরে বাড়তে থাকা অপরাধের নেপথ্যে বাইডেনের উদাসীন অভিবাসী নীতিই দায়ী। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই তিনি প্রথম কোপটা দিলেন অভিবাসনে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাদ গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যা নিয়ে কৌতুহলও সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও ভারতের তরফে ট্রাম্পের শপথে উপস্থিত থাকলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। জানা যাচ্ছে, তাঁর হাত দিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা-সহ একটি চিঠিও সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এখানেই শেষ নয়, “বিশেষ বন্ধু” ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সোশ্যাল মিডিয়ায় হার্দিক শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি লিখলেন, “আমেরিকার ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আশা রাখছি, দুই দেশের সুদূর ভবিষ্যৎকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে আবারও আগের মতোই একসঙ্গে কাজ করতে পারব আমরা। আশা রাখি, আপনার আগামী দিনগুলি আরও সাফল্যে ভরে উঠবে”। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, আগামীদিনে মার্কিন-ভারত সম্পর্কের রিসেট বটমটি টিপে রাখলেন নরেন্দ্র মোদি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার আগেই একটি নির্দেশ এসেছিল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রকে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগীরা বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট-সহ তিনজন সিনিয়র কূটনীতিককে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপের প্রথম ধাপ বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। জান যায় এই মার্সা বার্নিকট বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত থাকার সময় থেকেই শেখ হাসিনাকে সরানোর চক্রান্তের সূচনা হয়েছিল। জো বাইডেনের প্রশাসনের মদতে মার্সা বার্নিকট এতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বলেই অভিমত কূটনৈতিক মহলের একাংশের। পরবর্তী সময় বার্নিকট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের ডিরেক্টর পদে আসীন হন। এবার ট্রাম্প ক্ষমতায় আসতেই তাঁকে সরে যাওয়ার নির্দেশ এল। যুক্তরাষ্ট্রে সচরাচর দেখা যায়, প্রশাসনে রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেওয়ার পরপর নিজেরাই পদত্যাগ করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আগেভাগেই পদত্যাগের নির্দেশ এল, যা যথেষ্টই তাৎপর্যপর্ণ। ফলে ট্রাম্প যে বাংলাদেশ নিয়ে অন্য কিছু ভাবছেন, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, উদ্বেগের বিষয় হলো, এটা আরও বড় ধরনের খারাপ কিছুর পটভূমি তৈরি করতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শুরুর প্রথমেই এই ধরণের পদক্ষেপ গ্রহন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে ডোরালো চর্চা। বিশেষ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কারণ, বাইডেন প্রশাসনে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে অন্যতম প্রধান ভূমিকা নিতেন মার্সা বার্নিকট। তাঁকেই ওই মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল পদ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল। যা বাংলাদেশের নিরীখে বিশেষ বার্তা বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। তাঁরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প শিবিরের বাংলাদেশ সম্পর্কিত কৌশলগত অংশ। শেখ হাসিনাকে হঠানোর পিছনে মার্সা বার্নিকটের ভূমিকা নিয়ে গুঞ্জন ছিল। এবার কি ট্রাম্প সেই হাসিনাকেই মান্যতা দিতে চলেছেন? বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর দেওয়ালির শুভেচ্ছা জানানোর সময় বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যে বার্তা দিয়েছিলেন, তা অনেকেই এখন তুলে ধরছেন। অন্যদিকে, এই মুহূর্তে মার্কিন সফরে রয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি পরপর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে। সেখানেও বাংলাদেশ সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, যা পরবর্তী সময় রূপায়িত হতে দেখলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশেষ করে যখন নরেন্দ্র মোদি বিশেষ বার্তা দিয়ে বন্ধু ট্রাম্পকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। ফলে এখন দেখার বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের নীতি কোন পর্যায়ে থাকে।
Discussion about this post