বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসক বা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস কি তার নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন? থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠক ঘিরে নানান জল্পনা। বাংলাদেশেরই একটা অংশ দাবি করছে মুহাম্মদ ইউনুস ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ভুল করেছেন। যদি আরেকটা অংশ, বিশেষ করে সরকার পক্ষের দাবি, ব্যাংককে ভারতের নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস সরাসরি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে ভারতকে যথেষ্ট চাপে ফেলে দিয়েছেন। এছাড়া গঙ্গা ও তিস্তা জল বন্টন চুক্তি সহ আরো কয়েকটি দাবিতে ভারতকে চাপে ফেলা গিয়েছে। কিন্তু আদৌ কি তাই হয়েছে? বাংলাদেশের প্রেস সচিব শফিকুল আলম একের পর এক দাবি করে গিয়েছেন যা বাংলাদেশের স্বার্থ সম্বলিত। অন্যদিকে ভারতের তরফে যে প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে আবার উল্টো কথা বলা হচ্ছে। সবমিলিয়ে বলা যায়, নরেন্দ্র মোদি ও মুহাম্মদ ইউনূসের এই বৈঠক ঘিরে পরস্পর বিরোধী দাবি বিষয়টিকে আরও ঘোরালো করে তুলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চিনের এক সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকার। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ফের ভারত বিরোধিতার সুর শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। ফলে এই মানুষটিকে বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, মোদি ইউনূস বৈঠকে কে কোন জায়গা থেকে লাভবান হল? শেখ হাসিনাই বা কতটা বেকায়দায় পড়লেন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিটির নাম শেখ হাসিনা।
তিনি সেই গত বছর পাঁচ আগস্টের পর দেশ ছেড়েছিলেন এখনও ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। কিন্তু তাকে নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। তিনি কবে দেশে ফিরবেন, তিনি কি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরবেন নাকি অন্য কোনও ভূমিকায় দেশে ফিরবেন, আবার ভারত তাকে কি আদেও প্রত্যর্পণ করবে? এই ধরনের প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের জনমানসে। এর মধ্যেই বাংলাদেশের প্রেস সচিব দাবী করে বসলেন মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে সরাসরি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছেন। এরপর থেকেই তার সম্মান অনেকটাই বেড়েছে বাংলাদেশে। এমনিতেই তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের মনে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সেভাবে নেই। শেখ হাসিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মত করে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে যে ধরনের প্রচার করছেন, তাঁকে সুদি ইউনুস বলছেন সেটা খুব বেশি মনপসন্দ হয়নি বাংলাদেশের জনগণের। অন্যদিকে জামাতের হুজুর, উলেমাওরা একসময় মুহাম্মদ ইউনূসকে সুদখোর বলে সম্বোধন করতেন। তাকে রীতিমত গাল পারতেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে, মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কার্যত মসিহায় পরিণত হয়েছেন বাংলাদেশের জনমানসে। আবার ছাত্রনেতারা যতই তাকে আওয়ামী লীগ ফিরে আসা নিয়ে চাপ সৃষ্টি করুক না কেন, সেই তারাই চাইছে মুহাম্মদ ইউনূসকে সামনে রেখেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। সারজিসের এর মতো ছাত্র নেতারা তো মুহাম্মদ ইউনুসকে পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। আর এই প্রস্তাব বাংলাদেশের তরুণ সমাজের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন মুহাম্মদ ইউনূসের আরও পাঁচ বছর বা তারও বেশি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রচার চলছে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা, তিনি এক সময় বাংলাদেশের প্রবল জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ক্রমাগত নেগেটিভ প্রচার, এবং স্বৈরাচারী তকমা সেটে দেওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গিয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি যে দলীয় কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন সেটাও তাকে স্বৈরাচারী প্রমাণ করতে সাহায্য করছে। ফলে হাসিনাকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অনেকে আজও পছন্দ করলেও তরুণ সমাজ তাকে খুনি হাসিনা হিসেবেই চিনছেন। এটাও মুহাম্মদ ইউনূসের শক্তি। তাই তিনি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় পাচ্ছেন না। কারণ তিনি জানেন যে তার পিছনে রয়েছে বাংলাদেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী।
কিন্তু হাসিনার পাশে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সূত্রের খবর ব্যাংককে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনুসকে। বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ তুলতেই তাকে থামিয়ে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ফলে আগামী দিনে যদি শেখ হাসিনা পুনরায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে আশ্চর্যের কিছু হবে না। মোঃ ইউনুস যতই তার জাল বিস্তার করুক না কেন, এই মুহূর্তে তিনি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেক নজরে নেই। হাজার পজিটিভ দিকের মধ্যে এটা তার এক নেগেটিভ দিক। যা তাকে আগামীদিনে বিপদে ফেললেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
Discussion about this post