খেলা ঘোরালেন সেনাপ্রধান। সম্প্রতি সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান যে বার্তা দিয়েছেন তা ভারত বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যতকে চালনা করবে বলেই মনে করছে কুটনৈতিক মহল। ওপার বাংলায় যখন ভারতবিদ্বেষী মনভাব তখন সেনাপ্রধান চাইছেন ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে, যা এই মূহু্র্তে সত্যিই নজির বিহীন। অন্যদিকে চলতি মাসেই শপথ গ্রহণ করে মার্কিন মসনদে বসতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, এরপর স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশকে নিয়ে নয়া পদক্ষেপ নেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা বলাই বাহুল্য। এবার প্রশ্ন সেই আতঙ্কেই কি উল্টো পথে হাটছেন সেনা প্রধান?এই সাক্ষাতকারে কী কী বার্তা দিয়ে খেলা ঘোডাতে চাইলেন সেনাপ্রধান বিস্তারিত জানাবো আজকের এই প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান সুস্পষ্ট ভাবে তার সাক্ষাৎকারে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন দিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে একটি দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক রয়েছে, তিনি চাইছেন ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। বারংবার তার বক্তব্যের মধ্যে উঠেছে এসেছে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসাবেও ভারতের নাম।
শেখ হাসিনার পতন ও অন্তরবর্তী সরকার গঠনের পর কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস। ইউনুসের শাসন এর মাঝেই বিভিন্ন সময় ইউনুস সরকার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃত্বের সঙ্গে সেনাপ্রধানের মতবিরোধ হয়েছে এই ধরণের জল্পনা বহুবার তৈরি হয়েছিল। তবে কোনোটাই প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু অবশেষে নতুন বছরের শুরুতেই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে সাক্ষাৎকার দিলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। তার মতে বাংলাদেশের জন্য ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী।
সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে ‘একটা দেওয়া–নেওয়ার সম্পর্ক’ আছে। সেটা মেনে নিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে যেতে হবে।
প্রথম আলো’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধানের দাবি, ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। তিনি বলেন, ‘এই দেশের মানুষ যেন কোনওভাবেই মনে না করে ভারত বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করছে যা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী।’ সেই সঙ্গেই তাঁদের ‘কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী হয়’ এমন কিছু তাঁরা করবেন না বলেও জানান তিনি। ভারতের কাছে একই রকম ব্যবহার তাঁরা প্রত্যাশা করেন বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।
উল্লেখ্য, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির বাংলাদেশ সফর নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল চারদিকে। ছিল নতুন নতুন গুজব। গত ৩ মাস ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে যা ঘটেছে তা ৫২ বছরের ইতিহাসে একেবারে নজিরবিহীন। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বার্তা দিয়েছে ভারত। দু’দেশের স্বার্থ বজায় রেখে দীপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। ‘পারস্পরিক স্বার্থ’ বজায় রেখে এই সম্পর্ক রাখার কথা জানিয়েছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও।
এই সাক্ষাৎকারে একই সুর শোনা গেল বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের গলায়।ভারতের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক কেমন হবে তা জানিয়েছেন তিনি। তাঁরা চিকিৎসা-সহ অনেক বিষয়েই ভারতের উপর নির্ভরশীল বলেও জানান সেনাপ্রধান।
প্রসঙ্গত, হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। সেখানে এখনও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ইউনূস সরকারকে বার্তা দিয়েছে ভারত।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে ভারতের বিরাট স্বার্থ আছে। এটা একটা দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক।’
গত বছর ছাত্রজনতার আন্দোলন শুরুর পর থেকেই তৎপর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। কিন্তু সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এখনও বাংলাদেশে অব্যহত ‘মব জাস্টিস’। সেটা মেনে নিয়েছে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। তাই সুষ্ঠ নির্বাচন করা এবং সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সাহায্য করবে সেনা। সেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা জরুরি বলেও মনে করেছেন তিনি। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তার বার্তা, তারা যেন না মনে করেন যে ভারত তাঁদের ওপর কর্তৃত্ব বিস্তার করছে।
Discussion about this post