বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান মনে করেন দিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে একটি দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক রয়েছে, তিনি চাইছেন ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকুক। বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসাবেও চিহ্নিত করেছেন ভারতকে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তার বার্তা, তারা যেন না মনে করেন যে ভারত তাঁদের ওপর কর্তৃত্ব বিস্তার করছে।
শেখ হাসিনার পতন ও অন্তরবর্তী সরকার গঠনের পর কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস। ইউনুসের শাসন এর মাঝেই বিভিন্ন সময় ইউনুস সরকার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃত্বের সঙ্গে সেনাপ্রধানের মতবিরোধ হয়েছে এই ধরণের জল্পনা বহুবার তৈরি হয়েছিল। তবে কোনোটাই প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু অবশেষে নতুন বছরের শুরুতেই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে সাক্ষাৎকার দিলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। তার মতে বাংলাদেশের জন্য ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী।
সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে ‘একটা দেওয়া–নেওয়ার সম্পর্ক’ আছে। সেটা মেনে নিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে যেতে হবে।
প্রথম আলো’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধানের দাবি, ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। তিনি বলেন, ‘এই দেশের মানুষ যেন কোনওভাবেই মনে না করে ভারত বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করছে যা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী।’ সেই সঙ্গেই তাঁদের ‘কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী হয়’ এমন কিছু তাঁরা করবেন না বলেও জানান তিনি। ভারতের কাছে একই রকম ব্যবহার তাঁরা প্রত্যাশা করেন বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বার্তা দিয়েছে ভারত। আগেই বাংলাদেশে গিয়ে, দু’দেশের স্বার্থ বজায় রেখে দীপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। ‘পারস্পরিক স্বার্থ’ বজায় রেখে এই সম্পর্ক রাখার কথা জানিয়েছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও।
এ বার এই সাক্ষাৎকারে একই কথা বললেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।ভারতের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক কেমন হবে তা জানিয়েছেন তিনি। তাঁরা চিকিৎসা-সহ অনেক বিষয়েই ভারতের উপর নির্ভরশীল বলেও জানান সেনাপ্রধান।
প্রসঙ্গত, হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। সেখানে এখনও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ইউনূস সরকারকে বার্তা দিয়েছে ভারত।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে ভারতের বিরাট স্বার্থ আছে। এটা একটা দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক।’
গত বছর ছাত্রজনতার আন্দোলন শুরুর পর থেকেই তৎপর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। কিন্তু সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ায় এখনও বাংলাদেশে ‘মব জাস্টিস’ হচ্ছে । সেটা মেনে নিয়েছে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। তাই সুষ্ঠ নির্বাচন করা এবং সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সাহায্য করবে সেনা। সেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা জরুরি বলেও মনে করেছেন তিনি।
Discussion about this post