অফিসে নাইট শিফটে অনেকেই কাজ করে থাকেন। আজ কাল নাইট শিফটে কাজ করার পরিমাণ খুব বেশি বেড়েছে। আর তা হয়েছে ওয়ার্ক ফর্ম হোমের দৌলতে। ওয়ার্ক ফর্ম হোম হওয়ায় ছুটির সময় নির্দিষ্ট থাকেনা কারুর । এক নাগারে বাড়িতে কাজ করতে করতে রাত পেরিয়ে যায়। আই টি সেক্টর হোক কিংবা কল সেন্টার বিভিন্ন অফিসেই রাত জাগার ব্যাপারটা থেকেই। আবার শিফটিং ডিউটি হওয়ায় কারুর ভোর থেকে বিকেল অবধি কাজ থাকে, কারুর আবার বিকেল থেকে কাজ শুরু হয়। কারুর রাতে শিফটিং থাকে। রাতে কাজ করা সহজ নয়। এর ফলে বাড়তে পারে নানান রকম শারিরীক সমস্যা। কারণ আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে ঘুম বিশেষ প্রয়োজন। দিন থেকে রাত যেমন ক্লক ওয়াইজ হয়, আমাদের শরীর টাও ঠিক সে ভাবেই তৈরি, তাই রাতে ঘুম না হলে সেই ঘাটতি টা পুরোপুরি দিনে মেটানো সম্ভব হয়না। অনেকে আবার বিদেশি সংস্থার সাথে বাড়ি বসেই কাজ করেন , তারা সেই দেশের সময় অনুযায়ী অফিসের কাজ শুরুর করেন। ফলে স্বভাবতই তাদেরকে রাত জাগতে হয়।
কিন্তু জানেন কি, দীর্ঘদিন এভাবে রাত জাগার ফলে অনেক কঠিন রোগের সম্মুখীন হতে পারেন? বিশেষ করে স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদ রোগ, ক্ষুদা মন্দ ইত্যাদি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সারা রাত জেগে কাজ করেন, তাদের তুলনায় যারা দিনের বেলা কাজ করেন তাদের স্মৃতি শক্তি, কাজের উদ্যম, কর্মক্ষমতা অনেক বেশি। তাছাড়া গবেষণা এটাও জানাচ্ছে,পর পর তিন দিন নাইট শিফটে কাজ করে ডায়াবেটিস, ওবেসিটির মতো আরও অন্যান্য মেটাবলিক ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।নাইট শিফটের জেরে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী প্রোটিনের ছন্দপতন ঘটতে পারে। এটি এনার্জি মেটাবলিজমকে ক্ষতি করে। এর জেরে দেহে প্রদাহ তৈরি হয় এবং একাধিক মেটাবলিক ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তাই এর থেকে বাঁচতে, এবং রাত জাগার পরেও শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে কয়েকটি নিয়ম মানার সাথে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াও প্রয়োজন। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
রাত জেগে কাজ করার ফলে অনেকেই চা, কফি, গ্রীন টি খান, কিন্তু এগুলি মারাত্মক ক্ষতি করে। রাত জাগার ফলে শরীরের আদ্রতা এমনিতেই কম যায়, আর এই পানীয় গুলো আরো বেশি করে শরীরকে শুষ্ক করে তোলে ।এগুলি যে একদম খাবে না টা নয়, ১-২ বার খেতে পারেন চা, কফি। তবে খেলেও তাতে যেনো কোনো রকম সুগার না থাকে। এর পরিবর্তে সাদা নরম্যাল জল, এনার্জিটিক ড্রিংক খেতে পারেন।
যদি দীর্ঘদিন রাত জাগেন তবে সবুজ, শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন। বিশেষ করে রঙিন, জল জাতীয় খাবার খেতে পারেন। সবুজ, সতেজ, রঙিন জাতীয় সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই কার্যকরী । টম্যাটো, লেবু, গাজর, স্ট্রবেরি , লাউ, ঝিঙে ইত্যাদি খেতে পারেন।
রাতে যখন নাইট ডিউটি করছেন, তখন শরীরের বিশেষ খেয়াল রাখুন। রাতে হালকা ডিনার করে সারারাত টুকিটাকি খাবার খেতে পারেন। বিশেষ করে বাদাম জাতীয় খাবার, চিনা বাদাম, চিয়া বীজ, সোয়াবিন, শুকনো মুড়ি, চিঁড়ে ভাজা, চাল ভাজা ইত্যাদি খেতে পারেন। অন্যদিকে যখন রাত জাগছেন তখন ফাস্টফুড জাতীয় খাবার একদম প্রত্যাহার করুন। বিশেষ করে, বিরিয়ানি, মটন, চিকেন চাপ, পিৎজা, বার্গার ইত্যাদি একদম খাবে না । রঙিন পানীয় , কোল্ড ড্রিঙ্কস ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। এবং সর্বশেষে, ধূমপান কে এড়িয়ে চলুন।
এই নিয়ম মাফিক চললে রাত জেগে ডিউটি করার পরেও অনেকটাই দৈহিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন।
Discussion about this post