জনসন অ্যান্ড জনসনের পর এবার প্রশ্নের মুখে নেসলে, পেপসিকো এবং ইউনিলিভার। ভারতের বিখ্যাত তিন বহুজাতিক সংস্থার খাবারের গুণমান নিয়ে উঠে গেল বড়সড় প্রশ্ন। সম্প্রতি ভারত-সহ অন্যান্য নিম্ন-আয়ের দেশগুলিতে বিক্রিত পণ্যগুলিকে বৈশ্বিক সূচকের অংশ হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। আর তাতেই উঠে এল ভয়ানক চিত্র। অলাভজনক সংস্থা অ্যাক্সেস টু নিউট্রিশন ইনিশিয়েটিভ (এটিএনআই) দ্বারা প্রকাশিত গ্লোবাল ইনডেক্স অনুসারে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করছে এই সব বহুজাতিক খাদ্য নির্মাণকারী সংস্থাগুলি। জানা যাচ্ছে, এই বহুজাতিক সংস্থা গুলির দ্বারা বিক্রি হওয়া খাবার অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে দেওয়া ‘হেলথ রেটিং সিস্টেম’-এ কম স্কোর পেয়েছে বলে অভিযোগ।
গ্লোবাল ইনডেক্স অনুসারে, বিশেষ এই রেটিং সিস্টেমের অধীনে, ৩.৫-এর উপরে পাওয়া খাদ্য পণ্যগুলিকে স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু উচ্চ-আয়ের দেশগুলিতে বিক্রি হওয়া পণ্যগুলির ক্ষেত্রে ৫-এর মধ্যে গড় স্কোর ২.৩। আর নিম্ন আয়ের দেশগুলির ক্ষেত্রে তা আরও খারাপ, এখানে রেটিং এসেছে ১.৮, যা অত্যন্ত নিম্নমানের। সর্বভারতীয় সংবাদপত্র বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গ্রুপটি ৩০টিরও বেশি দেশে বিক্রিত খাদ্যপণ্যের মূল্যায়ন করেছে। সূচকটি প্রথমবারের মতো নিম্ন এবং উচ্চ আয়ের দেশগুলিতে মূল্যায়নকে বিভক্ত করেছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই সংস্থাগুলি বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলিতে যেখানে তাঁরা বেশি সক্রিয়, সেখানেই তাঁরা যা বিক্রি করছে, তা মোটেই স্বাস্থ্যকর পণ্য নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু দাবি করছে, স্থূলতায় আক্রান্ত ১০০ কোটি মানুষের মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি এই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বসবাস করেন। আর তাঁরা যে সমস্ত ঠান্ডা পানীয় বা প্যাকেটজাত খাবার খান সেগুলির গুণগত মান সঠিক রেটিংয়ে থাকে না। আর এই সমস্ত খাদ্য বা পানীয়ের অতিরিক্ত সেবনের জন্যই স্থুলতা এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে। বিগত কয়েক দশকে ভারতেও স্থূলতার প্রকোপ বেড়েছে। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে বলছে, ভারতে ১৫-৪৯ বছর বয়সী প্রায় ২৪% পুরুষ এবং ২৪% মহিলা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার শিকার। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এর প্রবণতা বেশি। যদিও সংবাদসংস্থাকে নেসলে ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তাঁরা আরও পুষ্টিকর খাদ্য বিক্রির জন্য বদ্ধপরিকর।
নেসলের দাবি, “আমরা আরও পুষ্টিকর খাবারের বিক্রি বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষকে আরও সুষম খাদ্যের দিকে পরিচালিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নেসলে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পুষ্টির ফাঁক বন্ধ করতে সাহায্য করার জন্য পণ্যগুলিকে আরও শক্তিশালী করছে”। অপরদিকে, পেপসিকো জানিয়েছে, “আমরা স্বীকার করি যে ব্যবসা এবং শিল্প উভয় পর্যায়েই সবসময় অনেক কিছু করার আছে”। সংস্থার দাবি, তাঁরা আলু চিপসের মতো পণ্যগুলিতে সোডিয়াম কমাতে এবং খাবারে পুরো মাত্রায় শস্যের মতো উপাদান যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার এই সমস্যা দূর করতে জোরদার প্রচার শুরু করেছে। বিশেষ করে স্থূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ এবং ‘ইট রাইট ইন্ডিয়া’ ক্যাম্পেন শুরু করেছে কেন্দ্র।
Discussion about this post