প্রথম চিত্র – আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন, আপনার মোবাইলে অথবা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারে প্রতি মাসে কম করে ৫ থেকে ৬টি মেসেজ আসে, যেখানে বলা হয় আপনি ৫ মিনিটেই লোন পেয়ে যাবেন। অথবা দ্রুত হোম লোন, কার লোন পাবেন কোনও একটি প্রতিষ্ঠান থেকে।
দ্বিতীয় চিত্র – ভুল বশত হোক বা লোভে পড়ে আপনি সেই মেসেজে আসা লিঙ্কে ক্লিক করে বসেছেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। বা ঋণের ফাঁদে পড়ে আপনি হাঁসফাঁস করছেন।
তৃতীয় চিত্র – আপনি মোবাইল বা সিম কার্ড কিনতে দোকানে গেলেন, আর জানতে পারলেন আপনার প্যান কার্ডটি বাতিল করা হয়েছে। অথবা আপনি কোনও হোটেলে চেক ইন করলেন, আর সেখানেই জানতে পারলেন আপনার প্যান কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
উপরের তিনটি চিত্র এখন ঘোর বাস্তব। যে কোনও সময়, যে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে এটা ঘটতে পারে। অথবা ঘটে গিয়েছে। বর্তমান সময় প্যান কার্ড ভারতীয় নাগরিকদের কাছে অন্যতম এক পরিচয়পত্র। যদিও এটির প্রধান কাজ হল আয়কর দফতরের সঙ্গে আপনার লিঙ্ক বজায় রাখা। অর্থাৎ আপনি আয়কর দিচ্ছেন অথবা আয়করের আওতায় পড়েন কিনা বা আপনার বার্ষিক আয়-ব্যায় পর্যালোচনা করার অন্যতম হাতিয়ার হল প্যান কার্ড। কিন্তু বর্তমান সময় আপনার প্যান কার্ডের বহুল ব্যবহার করা হচ্ছে আপনার অজান্তেই। ছোট-বড় বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান আপনারই অজান্তে আপনার প্যান কার্ডের তথ্য জেনে নিচ্ছে এবং ব্যবহার করছে। যা আপনি বুঝতেই পারছেন না।
ধরুন আপনি ব্যাঙ্ক থেকে কোনও প্রকার লোন নিয়েছেন। এর জন্য আপনাকে আপনার প্যান কার্ডের তথ্য ওই সংস্থাকে দিতে হবে। কিন্তু সেই তথ্যই আবার অন্যান্য সংস্থা হাতিয়ার করছে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। যখনই আপনার কোনও লোন শেষ হয়ে যাচ্ছে তখনই আপনাকে ফের টার্গেট করা হচ্ছে। এবার এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে ভারতের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। ভারত সরকার আগেই একটি কড়া আইন এনেছিল এই ঘরণের অপরাধ রোখার জন্য। ডিজিটাল পার্সোনাল ডাটা প্রোটেকশন আইন ২০২৩। নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রণয়ন করা এই কড়া আইন এবার কড়া হাতে কাজে লাগাতে চাইছে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
এই আইনের বলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই আপনার ক্রেডিট ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য আপনার অনুমতি নেবে। যদি আপনি বারণ করে দেন তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান কখনই সেই কাজটি আর করতে পারবে না। এই আইনের বলে এবার থেকে যেমন ওই ব্যক্তির সম্মতির প্রয়োজন, তেমনই ওই তথ্যর বৈধ ব্যবহার, বিস্বস্ততা রক্ষা এবং সেই তথ্যের উপর সেই ব্যক্তির অধিকার রক্ষা করার অঙ্গিকারও করতে হবে। যদি এটা কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি লঙ্ঘন করেন তাহলে কড়া শাস্তির বিধান রয়েছে ২০২৩ সালের ডিজিটাল পার্সোনাল ডাটা প্রোটেকশন আইনে। ব্যক্তিদের জন্য ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং সংস্থাগুলির জন্য কার্য বিশেষে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। ফলে বলাই যায় খুব শীঘ্রই প্যান কার্ড নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
Discussion about this post