চিকেন নেক নিয়ে চিন্তায় ভারত। পশ্চিমবঙ্গে উত্তরবঙ্গের রাজধানী শিলিগুড়ি, তারই আশেপাশে একটি খুবই ক্ষুদ্র অংশ যা চওড়ায় মাত্র কুড়ি বাইশ কিলোমিটার। একদিকে বাংলাদেশ অন্যদিকে নেপাল ভুটান, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সীমানা দিয়ে ঘেরা এই অংশটি ভারতের অংশ তবুও খুবই ক্ষুদ্র ও গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের ম্যাপ যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে বুঝবো এই অংশটি একেবারেই একটি মুরগির উদ্ধত গলা। তাই এই অংশটি কে চিকেন নেক বা মুরগির গলা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু গুরুত্বের বিচার এই অংশটি ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং বিদেশীদের কাছে এর গুরুত্ব অনেকটাই বেশি। কারণ এই চিকেন নেটের কুড়ি বাইশ কিলোমিটার অংশেই রয়েছে জাতীয় সড়ক ও রেলপথ যা ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি এবং সিকিমসহ আটটি রাজ্যকে যুক্ত করে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। গত বছরের পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমানে মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনা করছেন। তিনি যাদের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসছেন তারা কেউই ভারত বন্ধু নয়, তাই মুহাম্মদ ইউনূসও ভারত বন্ধু সেটা বলা যাবে না। সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে তিনি ভারতের এই সেভেন সিস্টার্স ও চিকেন নিয়ে নিয়ে এমন একটি মন্তব্য করেছেন যা ভারতের আভ্যন্তরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটা বড় হুমকি।
এই ধরনের মন্তব্য ভারতকে রীতিমত উস্কানি দেওয়া, অথবা ভারতের সেভেন সিস্টার্স লক্ষা করার জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া। চীন ওই প্রস্তাবে রাজি হবে কিনা সেটা পরের কথা, কিন্তু ভারত সরকার কিছু করে থাকতে পারে? তাই চিকেন নেক বা শিলিগুড়ি কলটা জুড়ে একটা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীও বিমান বাহিনী এই শিলিগুড়ি কর্টোর ঘিরে রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতি সেরে ফেলেছে। বেশ কয়েকটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে পাশাপাশি ভারত তার বন্ধু দেশদের বাংলাদেশের আশেপাশে নিয়ে এসেছে। নয়াদিল্লির সাউথ ব্লক ও নর্থ ব্লক যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কার্যালয় পরিচিত সেখানে চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। জানা যাচ্ছে ভারতের তিন সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গেও লাগাতার বৈঠক চলছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে একটা সাক্ষাৎ করেছেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রকের সঙ্গে। ভারত কি সরাসরি যুদ্ধে যাবে? বর্তমানে কূটনৈতিক মহলে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে।
ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী আইন পাস হওয়ার পর, গোটা ভারতেই একটা বিরোধিতার আবহাওয়া তৈরি হয়েছিল। কিন্তু একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ লাগোয়া মুর্শিদাবাদ জেলা অশান্ত হয়ে ওঠে। এই জেলায় বাংলাদেশি জঙ্গি যোগের তথ্য পেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস তা মানতে নারাজ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ সেই তথ্য খারিজ করেছেন, উল্টোদিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এই মুহূর্তে ঠিক হলেও মুর্শিদাবাদ, মালদা, দুই ২৪ পরগণা এবং নদিয়ার মতো কয়েকটি জেলা নিয়ে চিন্তা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। দক্ষিণবঙ্গের এই জেলাগুলি কার্যত বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। অপরদিকে উত্তরবঙ্গের যে জেলাগুলি বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া, সেখানে ভারতীয় স্থলসেনা ও বায়ুসেনার ঘাঁটি দিয়ে সুরক্ষিত। ফলে ওই জেলাগুলিতে সেভাবে হুল ফোটাতে পারছে না বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনগুলি। মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা এবিটি-র নেতা জসীমুদ্দিন রহমানী হফি। জেলমুক্তির পরই তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে কি বলেছিলেন সেটা নিষ্চই আপনাদের মনে আছে?
বঙ্গ বিজেপির নেতারাও দাবি করছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু তোষনের নাম করে এই রাজ্যকেও অস্থির করে তুলেছেন। অপরদিকে কেন্দ্রীয় বিজেপি বহু সুযোগ পেয়েও পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেনি। ফলে এবার প্রাক্তন সেনা কর্তা থেকে শুরু করে বিজেপির বহু সাংসদ দাবি করছেন, বাংলাদেশকে একটা সবক শেখানোর ব্যবস্থা করার। ফলে এবার বাংলাদেশে একটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা সেনা অভিযান হলেও আশ্চর্ষের কিছু হবে না। ভারত কি সেই পথেই এগোচ্ছে? উত্তর মিলবে অচিরেই।
Discussion about this post