বাংলাদেশকে সতর্কবার্তা ভারতের! বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার জামানকে, তারই সুরে সতর্ক করলো ভারত। সদ্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে গৃহীত আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের পর, মধ্যরাতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ফোন করে সে দেশের সেনাপ্রধানকে সতর্ক থাকার বার্তা দেন। কারণ বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে, সেখানে সেনাপ্রধান নির্বিকার! আর সেনাপ্রধানের এই গতিবিধি একেবারেই ভালো চোখে দেখছে না ভারত।
বাংলাদেশের সরকার পতন ও নতুন সরকার গঠনের পর থেকেই ঘটনার ঘনঘটা বাংলাদেশ জুড়ে। কখনো ভারত বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে আবার সংখ্যাটুকু ও হিন্দুদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার চালিয়েছে কট্টরপন্থী সংগঠন আর এবার নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসের। কিন্তু এই সবকিছুর মাঝে সেনাপ্রধানের ভূমিকা যেন ধীরে ধীরে ম্লান হতে শুরু করেছে। আর এই পরিস্থিতিতে ই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল সরাসরি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ মানকে টেলিফোনের মাধ্যমে জানান দেশ যখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন দেশের সেনাপ্রধান বিদেশ সফর করছেন। যদিও সেটি সেনাপ্রধানের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্ভুক্তির সরকার আর সেখানে সেনাপ্রধান তার যথাযথ কর্তব্য পালন থেকে বিরত থাকছেন। আর এইসব কথাগুলোই বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই বলা হয়েছে ভারতের তরফে। এরপর অজিত ডোভাল তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল জামানকে বলেন, আমি আপনার কথাই আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি, আপনি যদি এভাবে দেশ চালাতে থাকেন তবে ভারতের সমস্ত সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবে। অবিলম্বে এর ব্যবস্থা নিন ভারত এখনো আপনার ওপর আশাবাদী। এটা আপনাকে শেষবারের মতোই বলে দেওয়া হলো, পরে বলবেন না যে ভারতবর্ষ আপনাকে সতর্ক করেনি।” অর্থাৎ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার এই সতর্কবার্তা শুনে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে তিনি কিছু মাস আগে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের দেওয়া দেশের নাগরিকের প্রতি সতর্কবার্তার সুরে তাকে সতর্ক করে দিলেন। অর্থাৎ ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ষষ্ঠদশ বার্ষিকীতে দেশে বিরাজমান পরিস্থিতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। পাশাপাশি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, ‘‘আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, পরে বলবেন যে আমি সতর্ক করিনি৷ আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি৷ আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা–ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে৷ আমি আজকে বলে দিলাম নইলে আপনারা বলবেন যে আমি আপনাদের সতর্ক করিনি৷ আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের৷ এই দেশ আমাদের সবার৷ আমরা সবাই সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই৷ আমরা চাই না হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি৷” সেদিন সাধারণ নাগরিকের উদ্দেশ্যে কোন সুরে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান চলুন শুনে নেয়া যাক,,
অর্থাৎ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামানের চালেই তাকে বাজিমাত করেছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, তা একেবারেই স্পষ্ট।
সূত্র বলছে এর আগেই ভারতের সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দিবেদী তিনি উষমা প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে সে দেশের সেনা প্রধানের গতিবিধি আচার-আচরণ নিয়ে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে। শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বিশেষ সভা হওয়ার পরে যমুনার সামনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সভার সিদ্ধান্ত জানান আইন বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কি জানালেন আইন উপদেষ্ঠা নজরুল শুনুন,,
প্রসঙ্গত, গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। গণ-অভ্যুত্থান দমনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণহত্যা ও আওয়ামী লীগের শাসনের সময়ে গুমের অভিযোগগুলোর বিচারের উদ্যোগ নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এ জন্য গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে সরকার। আর এবার সাময়িকভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই শুরু করল সে দেশের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস।
Discussion about this post