বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক হাল নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বিগত ৯-১০ মাসে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা একেবারেই তলানিতে নিয়ে এসেছে। এই দাবি করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাঙ্ক। তাঁদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। জিডিপি থেকে শুরু করে বৈদশিক মুদ্রা ভাণ্ডার সবেতেই আশঙ্কার চিত্র। ১৮ কোটির যে বাংলাদেশে সিংহভাগই অতি দরিদ্র শ্রেনির, সেই বাংলাদেশ এবার অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে চায়। আর সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে রংপুর জেলার লালমনিরহাট এয়ার বেসে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে গড়ে উঠবে বাংলাদেশ এরোস্পেস গ্ৰুপ অফ ইনডাস্ট্রিস। গত ১লা মে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিফিয়াল ওয়েবসাইডে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ আগামীদিনে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। বিষয়টি ভারত সরকার লাল সতর্কতা হিসেবেই দেখছে বলেই সূত্রের খবর।
বাংলাদেশ যে একার কৃতিত্ববে অত্যাধুনিক যুদ্ধস্ত্রে আত্মনির্ভর হতে পারবে না, এটা একপ্রকার নিশ্চিত। তাহলে কাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ এরোস্পেস গ্ৰুপ অফ ইনডাস্ট্রিস গড়তে চাইছেন মুহাম্মদ ইউনূস? ওয়েবসাইডে সেটাও উল্লেখ আছে। এটা জানার আগে জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হাতে এই মুহূর্তে কি কি আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট বলছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হাতে এফ-৭ সিরিজের যুদ্ধবিমান এবং এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার রয়েছে। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা। পাশাপাশি সম্প্রতি চিন ও পাকিস্তান থেকে নেওয়া কয়েকটি যুদ্ধবিমানও রয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হাতে। আপনাদের নিশ্চিই মনে আছে, কয়েকদিন আগে পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাক যুদ্ধ আবহে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, এবার আমাদেরও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত!
এবার দেখা গেল, বাংলাদেশ পুরোপুরি ঝাঁপিয়ে পড়েছে একটি সম্পূর্ণ ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রী বা পার্ক তৈরির লক্ষ্যে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে লালমনিরহাটে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অ্যারোস্পেস গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রসঙ্গত, এই লালমনিরহাটের অবস্থান ভারতের চিকেন নেক তথা শিলিগুড়ি করিডোর থেকে মাত্র ২০-২২ কিলোমিটার দূরে। ফলে ভারতের সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার কার্যত নাকের ডগায় বাংলাদেশ তৈরি করছে বৃহত্তম এয়ার বেস এবং অ্যারোস্পেস শিল্পতালুক। যেখানে দেশীয় প্রযুক্তিতে সামরিক বিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে ইউনূস সরকার। পাশাপাশি লালমনিরহাটে প্রায় দেড় হাজার একর এলাকাজুড়ে তৈরি হবে অত্যাধুনিক এয়ারবেস এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সেখানে থাকবে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা। পাশাপাশি তরুণদের জন্য উচ্চ প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকছে বলে দাবি। ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশ অ্যারোস্পেস গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা খাতে বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরতা অর্জন করতে পারবে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এত টাকা কে দেবে বাংলাদেশকে? জানা যাচ্ছে, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে, যার মধ্যে চীন, তুরস্ক ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ সহযোগীতা করতে চলেছে। পাশাপাশি পাকিস্তানও রয়েছে এই প্রকল্পের অন্যতম অংশীদার হিসেবে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তুরস্ক সফরকালে তুর্কি অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান মেহমেত দেমিরওলুর সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে উভয় পক্ষ বিভিন্ন সামরিক ড্রোন কেনা, প্রযুক্তি স্থানান্তর, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হয়েছিলেন। পাশাপাশি সম্প্রতি চিন সফরে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস লালমনিরহাটের এয়ারবেসে চিনা লগ্নি আহ্বান করে এসেছিলেন সে দেশের সামরিক সরঞ্জাম নির্মাতা সংস্থাগুলির কাছে। এরপরই গত ১লা মে সরকারি ওয়েবসাইটে দেখা গেল লালমনিরহাটকে ঘিরে বিশাল কর্মকাণ্ডের বিজ্ঞাপন। ওই ওয়েবসাইটে যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তা দেখে বোঝা যাচ্ছে, সেখানে এয়ারবেসের পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের সুযোগসুবিধাও থাকবে।
এবার আসা যাক ভারতের কথায়। শিলিগুড়ি করিডোর খুব কাছেই লালমনিরহাটে এই ধরণের কর্মযজ্ঞ যে ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য মোটেই সুবিধের নয় এটা স্বাভাবিক। কারণ, তিন দিক থেকে ভারতের পেটের ভিতর ঢুকে থাকা বাংলাদেশ কার সঙ্গে যুদ্ধ করবে? যদি তাঁরা আকাস প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতেই চায়, অথবা নিজেদের যুদ্ধবিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে চায় তাহলে দোষের কিছু নেই। কিন্তু চিন, পাকিস্তান ও তুরস্কের সহায়তায় এটা করা মানে সরাসরি ভারতের নিরাপত্তায় আঘাত করা। ফলে ভারত এই প্রকল্প নিয়ে আপত্তি করে কিনা সেটাই এখন দেখার।
Discussion about this post