বিশ্বের দুই প্রান্তে দু’টি সক্রিয় যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন, ইজরায়েল- হামাস। অন্যদিকে সরকারি ভাবে যুদ্ধ ঘোষণা না হলেও ভারত পাকিস্তান সংঘাতের আবহে যুদ্ধ পরিস্থিতি অনুভব করছে গোটা বিশ্ব।
পহেলগাঁও-নৃশংসতার ভয়ংকর কোন প্রত্যাখ্যাত করবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, তা কারোরই অজানা ছিল না। তবে সন্তোষীদের 15 দিনের মাথায় ভারত যে পাকিস্তানে অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে এত বড় প্রত্যাঘাত করবে তা ছিল কল্পনাতীত। প্রত্যাঘাত পাল্টা প্রত্যাঘাতে জড়িয়ে পড়ল ভারত ও পাকিস্তান। আর এই যুদ্ধের আবহে গোটা বিশ্ব দুটি ভাগে ভাগ বিভক্ত। কেউ পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় ও আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে, কেউ আবার সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতের কড়া প্রত্যাঘাতের পক্ষে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ও সেনাবাহিনীর উপর কোন রকম আঘাত না হেনে ভারত পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দিয়ে এসেছিল। কিন্তু এরপর পাকিস্তান পাল্টা প্রত্যাঘাত হিসাবে সরাসরি ভারতের সাধারণ জনজীবনের উপর হামলার চেষ্টা চালায়। পাকিস্তানের সেই চেষ্টা যদিও সফল হয়নি, উল্টে পাকিস্তানের গাভীর শহর ধ্বংস করে দিয়েছে ভারত। ভারতের সাথে এটে উঠতে না পেরে সীমান্তবর্তী এলাকার প্রতিনিয়ত গোলাবর্শন শুরু করেছে পাকিস্তান। কিন্তু এই সংঘাতকে ঘিরে, এখন পারদ চড়ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির। আর এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের তাবড় তাবড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি কার পক্ষ নেবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
পহেলগাঁওয়ের জবাবে শুরুতেই ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ভারতের অপারেশন সিঁদুরের পরই মুখ খুলেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দেশকে সংযম বজায় রাখার বার্তা দিলেও, ভারত এর এই অপারেশন যে ‘টিট ফর ট্যাট’ অর্থাৎ ঘাতের প্রত্যাঘাত তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন ট্রাম্প। এমনকি বৃহস্পতিবার রাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আঘাত, পাল্টা আঘাত চলাকালীনই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে কথা বলেন আমেরিকার বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও। পাক প্রধান মন্ত্রীকে স্পষ্ট ভাষায় মার্কিন বিদেশ সচিব জানিয়ে দেন, সন্ত্রাসী মদত বন্ধ করতে হবে, কোনও রকম মদত থাকলে, অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
পাশাপাশি রাশিয়া নিজে এখনও ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ লড়ছে। রাশিয়া সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করে। গোটা বিশ্বকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিতে আহ্বান জানান। তবে রাশিয়া ভারতের বিপদ-আপদের সঙ্গী। স্বাধীনতার সময় থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক মজবুত। যে S-400 প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাকিস্তানের হানা ঠেকিয়েছে ভারত, তা রাশিয়ার থেকেই আমদানিকৃত।
পাকিস্তান ও চিনের মোকাবিলা করতে ফ্রান্সের সংস্থা থেকেই রাফাল যুদ্ধবিমান কেনে ভারত।ভারত পাকিস্তানে স্ট্রাইক চালানোর পর ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী জানান, সন্ত্রাসের হাত থেকে আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার আছে ভারতের। তবে নাগরিকদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তার জন্য সংঘাত এড়ানোর পরামর্শ দেন। তবে ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক।
ভারত পাকিস্তানে স্ট্রাইক চালানোর পরই সমর্থনে এগিয়ে আসে ইজরায়েল। ভারতে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত রুবেন আজহার জানান, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইজরায়েল। নিরীহ মানুষকে খুন করে যে লুকনো যাবে না, তা জঙ্গিদের বোঝা উচিত বলে জানান।
অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষে থাকার নিদর্শন এর আগেও দেখিয়েছে তুরস্ক ভারত স্ট্রাইক চালানোর পর তুরস্কের রাষ্ট্রদূত পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। জানান, ভারত পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। সোস্যাল মিডিয়ায় একথা জানান পাক প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।
এবার রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতারেষের দাবী এই মুহূর্তে আর একটি সামরিক সংঘাত সহ্য করার মতো অবস্থায় নেই আন্তর্জাতিক মহল। অর্থাৎ দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে এই ধরনের সংঘাত নিয়ে ক্রমশই জল ঘোলা হচ্ছে। ভারত পাক সম্পর্ক যত উত্তপ্ত হচ্ছে ততই, এই সংঘাতে বিশ্বের বিভিন্ন অবস্থান ঠিক কি তা স্পষ্ট হচ্ছে।
Discussion about this post