ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক তিক্ত জায়গাতে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে নানা মন্তব্য ধেয়ে আসছে। কার্যত হুমকি বলে গন্য করছেন অনেকে। যদিও তা নিয়ে চিন্তিত নয় ভারত। তবে রাজনৈতিক মহলে বলা হচ্ছে, নতুন বছরের জানুয়ারি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। ভয়ঙ্কর হতে চলেছে জানুয়ারি। আরও জটিল হতে চলেছে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক। ভারতের তরফে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, বলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
২০২৪-এ ৫ই আগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। গঠিত হয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। সেই সরকারের মাথায় বসানো হয়েছে মুহম্মুদ ইউনূসকে। কিন্তু তারপর শান্ত হয়নি বাংলাদেশ। বরং বাংলাদেশের অন্দরের একের পর এক ঘটনা কার্যত অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করেছে গোটা দেশে। যেমন, ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে গ্রেফতার করে সেখানকার পুলিস। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আনা হয়। মাসের পর মাস কেটে গেলেও এখন জেলেই রয়েছেন ইসকনের সন্ন্যাসী। এদিকে এই ঘটনায় উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। অন্যদিকে বেছে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন চালানো হচ্ছে, সেই অভিযোগও উঠছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে। এই ঘটনা নিয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার বার্তা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অন্তবর্তীকালীন সরকারকে। কিন্তু পরিস্থিতি কোনওভাবেই বদলানি। বরং দেশের অভ্যান্তরে ভারত বিরোধী জিগির তুলে দেওয়া হয়েছে। ভারত-বিদ্বেষী এমন চরম জায়গায় পৌঁছেছে, ভারতের পতাকা অবমাননা করা পর্যন্ত হয়। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও সেই ঘটনা যে ভারত সরকার ভালোভাবে নেয়নি, তাও প্রায় সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনার দিকে নজর রাখলে স্পষ্ট হয়। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, জানুয়ারি মাসে ভারত বাংলাদেশের উপর যদি কোনওরকম সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো কোনওরমক সামরিক অভিযান চালায়, সেক্ষেত্রে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে ভারত যদিও এরকম ধরণের কিছু পদক্ষেপ করে, তা সর্তক হয়ে, ভেবে চিন্তেই করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ যে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, একটি পাতা ফাঁদ, তা ইতিমধ্যেই বুঝে গিয়েছে অনেকে।
যেমন… রাশিয়া একটি বিশ্বের দ্বিতীয় সামরিক শক্তিশালী দেশ। তারা ইউক্রেনের সঙ্গে টানা দু বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও কিন্তু পরাস্ত করতে পারেনি ইউক্রেনকে। কেন একটি ১৮তম স্থানে থাকা ইউক্রেনকে দ্বিতীয়তম স্থানে থাকা দেশ কাবু করতে পারছে না? এর পিছনে রয়েছে একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়। তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে ইউক্রেনের যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি কোনওভাবে রাশিয়ার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক খারাপ করতে চাননি। কিন্তু পশ্চিমি শক্তিশালী দেশ তারা একছত্র ক্ষমতার জন্য রাশিয়াকে দুর্বল করার চেষ্টা করছিল। আর দুর্বল করার জন্য রাশিয়াকে একটি যেকোনও যুদ্ধে যদি লিপ্ত করে দেওয়া যায় তবে অর্থনৈতিকভাবে এবং সামরিকভাবে রাশিয়া অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে ঘুরপথে ইউক্রেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে অন্য জেলেনস্কিকে প্রেসিডেন্ট করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি টোপ দেওয়া হয়, ইউক্রেনকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এদিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, জো বাইডেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনের পাশে থেকেছে। ইউক্রেনকে সামরিক শক্তি দিয়ে সাহায্য করেছে। পশ্চিমি দেশগুলি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপর প্রত্যেকেই চাপ সৃষ্টি করেছে। তাই ইউক্রেন বহু দেশের থেকে সহযোগিতা পেয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া শক্তিশালী দেশ হওয়া সত্বেও ইউক্রেনকে বাগে আনতে পারেনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়া হল। ছাত্ররা যে যে শর্ত রেখেছিল সরকারের কাছে, শেষ পর্যন্ত তাই মেনে নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তারপরও দেশ ছাড়তে হল শেখ হাসিনাকে। পরে বাংলাদেশের মসনদে বসলেন মুহম্মুদ ইউনূস। তারপরই ভারত বিরোধী জিগার।
এখানেই ষড়যন্ত্র দেখছেন অনেকে। তবে কি বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী দেশ ভারতকে দুর্বল করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ লাগাতে চাইছে? তবে ভারত যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা ভেবেচিন্তে…মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Discussion about this post