ছাত্র নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র তথা ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বত্রন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘটনা গোটা বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরেই দেশের বিক্ষুব্দ জনতা যে নক্কারজনক কাজকর্ম করেছে তাদের শান্ত থাকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এনসিপি শাহবাগে তাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে তারা বাংলা মোটরে বিক্ষোভ করতে চেয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দিক থেকে বলা হচ্ছে, হাদির মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাগুলি যেন অন্যদিকে প্রবাহিত না করা হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। অনেকের মতে, এটি নির্বাচন বানচাল করার একটা ষড়যন্ত্র।
হাদির মৃত্যুকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জুড়ে চলেছে তাণ্ডবলীলা। আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকার সায়ের তার সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করে ১১ টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা জানিয়েছেন, তিনি লিখেছেন, শুধু হাদি অজুহাতে,
১) খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারতের হাইকমিশনের কার্যালয় ও বাসভবনে হামলা।
২) প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ঢাকার প্রধান কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ।
৩) ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে আবারো অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর।
৪) ছায়ানটের কার্যালয়ে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ।
৫) ইন্দিরাগান্ধী কালচালার সেন্টার ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ।
৬) উত্তরাতে ৩২টি দোকান ভাংচুর ও আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।
৭) রাজশাহীতে ডেইলিস্টার-প্রথম আলোর কার্যালয় ভাংচুর।
৮) ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবক-কে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা!
৯) চট্রগ্রামের প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় পুনরায় অগ্নি-সংযোগ, ভাংচুর।
১০) সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।
১১) নিউজ এজ সম্পাদক নুরুল কবীরের উপর হামলা।
তিনি শেষে একটি প্রশ্ন করেন যে, ওসমান হাদির লাশ সামনে রেখে দেশে নৈরাজ্য ও অচলাবস্থা সৃষ্টি করছে কারা ?
অন্যদিকে, নিউ এজ এর সম্পাদক সাংবাদিক নুরুল কবির ঘটনাস্থলে গেলে তাকে আওয়ামীলীগের উপাধি দিয়ে আওয়ামীলীগের দোসর বলে লাঞ্ছিত করা হয়। এর প্রেক্ষিতে জনপ্রিয় উপস্থাপিকা কাজী জেসিন তার সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে বলেন, তাহলে, যাকে তাকে আওয়ামীলীগ বলা যায়। নূরুল কবীর শুধু আওয়ামীলীগের সমালোচনা করেই নিজের জীবন এবং পরিবারকে ঝুঁকির মধ্যেমই ফেলেন নি, তিনি ১/১১ সময়কালে আমার দেখা একমাত্র সম্পাদক যিনি কোনোরকম কম্প্রোমাইজ না করে, নানাবিধ হুমকির কাছে মাথা নত না করে, পুরোটা সময় বোল্ডলি প্রতিবাদ করে গেছেন। আজ তাকে বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ। কেউ মব সমর্থন না করলেই তাকে আওয়ামীলীগ বলা হবে তাহলে ? এই জন্য হয়েছিল গন অভ্যুকত্থান ? সাংবাদিকদের ভেতরে রেখে ভবনে আগুন দিচ্ছেন আপনারা। ভবন পোড়াচ্ছেন, নাকি রাষ্ট্রটাই পুড়িয়ে ফেলতে চাইছেন ?
ভবনের কি শক্তি আছে ? সে কি গড়তে পারে নাকি ভাঙতে পারে ? গড়ে তো মানুষ, মানুষের চিন্তা। চিন্তাকে পোড়াবেন কি করে ?
অন্যদিকে, ডেইলি ষ্টার এলাকায় একজন গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ঘটনাটি মব বললে উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে পরে তারা অস্বীকার করে এটি মব না। পাশাপাশি চিফ এডভাইসারের পেজ থেকে একটা পোস্ট করা হয়েছে। অন্যদিকে, ছায়ানটে পরিদর্শনে গেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী। তিনি সরকারের পোস্ট শেয়ার করেন, সেখানে লেখা, ছায়ানট ভবন পরিদর্শনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা, সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫: ছায়ানট ভবনে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে তিনি ধানমন্ডির শংকরে ছায়ানট ভবন পরিদর্শন করেন, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জায়গাগুলো দেখেন এবং ছায়ানটের সংগঠক পার্থ তানভীর নভেদসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেন। পরিদর্শন শেষে সংস্কৃতি উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। এই ভবনে হামলা চালানো হয়েছে, অনেক ক্ষয়ক্ষতি সাধন হয়েছে। আমি ছায়ানট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করে যাবতীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে প্রতিষ্ঠানটি যেন দ্রুত চালু করা যায় এ ব্যাপারে আর্থিক সহায়তা সহ সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে। ছায়ানট পরিচালনা কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এ বিষয়ে আমাদেরকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন। এই ভবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ছায়ানটের বাইরে বিজিবি ও পুলিশ কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। আমি উপদেষ্টা পরিষদের অন্যান্যদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করেছি, বলেন তিনি। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা অবশ্যই নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র। আজ আমাদের কথা বলার কথা শহীদ ওসমান হাদিকে নিয়ে। আজ আমাদের শোকাতুর হওয়ার কথা। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়েছে কারা ? কারা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটে হামলা করেছে ? যারা করেছে তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ চায় না। সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও বলেন, এই জাতীয় শোকের মুহূর্তে এক শ্রেণীর হঠকারী দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট এ হামলা চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে। মৃত্যুঞ্জয়ী হাদীর মৃত্যুতে কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলা কেবল একটি ফৌজদারী অপরাধই নয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনারও পরিপন্থী।
পাশাপাশি চিফ এডভাইসারের পেজ থেকে একটি ফোন আলাপের পোস্ট করা হয়, সেখানে সরকারের তরফে নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ। ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫: গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় পত্রিকা দুটির সম্পাদকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের প্রতিষ্ঠান ও সংবাদকর্মীদের ওপর এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও ন্যক্কারজনক হামলা আমাকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। আপনাদের এই দুঃসময়ে সরকার আপনাদের পাশে আছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ওপর এই হামলা স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলার শামিল। এই ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে এক বিরাট বাধা সৃষ্টি করেছে। টেলিফোনে আলাপকালে সম্পাদকদের ও সংবাদমাধ্যমগুলোর পূর্ণ নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা। খুব শিগগিরই এই সম্পাদকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সবমিলিয়ে বাংলাদেশে ভারতের যে সকল প্রাতিষ্ঠানিক কার্যালয়ে হামলা সহ বাকি যে নক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা বাংলাদেশের জন্য সুখকর হবে না তা নিশ্চিত।












Discussion about this post