পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার ১৫ দিনের মাথায় ভারত পাকিস্তানের মাটিতে এক বড়সড় অভিযান চালায়। ভারতীয় সেনার করা ওই অভিযানের পোশাকী নাম ছিল অপারেশন সিঁদুর। গত ৬ ও ৭ মে মধ্যরাতে ভারতীয় সেনা একযোগে মোট ৯টি জঙ্গিঘাঁটিকে টার্গেট করে গুঁড়িয়ে দেয়। মূলত বিমানবাহিনীকে ব্যবহার করে আত্মঘাতী ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে লস্কর ও জৈশের মতো বিশ্বত্রাস জঙ্গি সংগঠনগুলির হেডকোয়ার্টার ও অন্যান্য ঘাঁটি ধ্বংস করে ভারত। এই ৯টি জঙ্গিঘাঁটির মধ্যে পাঁচটি ছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এবং চারটি পাকিস্তান ভূখণ্ডেই অবস্থিত। এই অপারেশন চালু হওয়ার আগে পাকিস্তানের আইএসআই এবং বিশ্বের তাবড় গুপ্তচর সংস্থাগুলি ঘ্রুণাক্ষরেও টের পায়নি ভারত কি করতে চলেছে। পাশাপাশি অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারতীয় সেনা দেখিয়ে দিল, পাকিস্তানের এয়ার ডিভেন্স সিস্টেম এবং পাকিস্তান বিমানবাহিনী কতটা অকার্যকর। কারণ, কার্যত বিনা বাঁধায় ভারতীয় সেনা দূর নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রের সাহায্যে ওই ৯টি জঙ্গিঘাঁটি একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে আসে। ভারতের দাবি ছিল, মূলত সন্ত্রাসী সংগঠন এবং জঙ্গিদেরই টার্গেট করে নিয়ন্ত্রিত এবং পরিমিত হামলা চালানো হয়েছে। ভারত কোনও সামরিক এবং বেসামরিক কাঠামোতে আঘাত হাঁনেনি। কিন্তু পাকিস্তানি সেনা সে কথা না শুনেই ৭ মে রাতে ভারতে হামলা চালায়। শয়ে শয়ে ড্রোন উড়ে আসে ভারতের দিকে। কিন্তু এবারও ভারত দেখিয়ে দেয়, তাঁদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কতটা পোক্ত এবং দুর্ভেদ্য। পাকিস্তানের একটা আক্রমণও ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে মাটিতে আঘাত করতে পারেনি। সেই রাতেই পাল্টা আক্রমণ হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে। লাহোর, রাওয়ালপিণ্ডি-সহ একাধিক পাক শহরের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম গুঁড়িয়ে দিয়ে আসে ভারতীয় সেনা। নয়া দিল্লির দাবি, প্রত্যাঘাত হিসাবে ফের পাক সেনার একাধিক বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল ভারতের সশস্ত্র বাহিনী। পাকিস্তানের সরগোধার মুশাফ, রাওয়ালপিন্ডির নুর খান, উত্তর সিন্ধের সুক্কুর-সহ বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে হামলার যে চিত্র প্রকাশ করেছে ভারতীয় সেনা, তাতেই বোঝা যাচ্ছে ভারত পাকিস্তানি সেনার কোমর ভেঙে দিয়েছে।
পাক বিমান প্রতিরক্ষা রেডার এবং বিমানঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে ভারতের প্রত্যাঘাতী হামলার পরবর্তী বেশ কিছু ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পাক বিমানঘাঁটিগুলি কার্যত ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রানওয়েতে বড় বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে। কোথাও ভেঙে পড়েছে বিমানঘাঁটির ছাদ, কোথাও আবার ভেঙে গিয়েছে আস্ত হ্যাঙ্গারও। ফলে হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমান যে বিপুল সেটা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু তাতেও নিরস্ত্র হয়নি পাকিস্তান। আবারও হামলা ভারতকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় ইসলামাবাদ। ফলে এর পরের প্রত্যাঘাত ছিল আরও ভয়ানক। ভারতের এয়ার মার্শাল একে ভারতী সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘১০ মে রাতে তিন ঘণ্টার মধ্যে একে একে নুর খান, রফিকি, মুরিদ, পাসরুর, চুনিয়ান, সরগোধা, স্কার্দু, ভোলারী এবং জ্যাকোবাবাদ-সহ ১১টি ঘাঁটিতে আক্রমণ করা হয়। ভারতের প্রতিটি হামলাই সুনির্দিষ্ট মাপজোকের ভিত্তিতে করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভারতের প্রতিরক্ষা কর্তারা দাবি করছেন, পাকিস্তানের কোনো পরমানু অস্ত্র ভাণ্ডারে আঘাত করেনি ভারত। কিন্তু বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দাবি, পাকিস্তানের অন্তত একটি পারমানবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং সেখানে তেজস্ক্রিয় কার্যকলাপ লক্ষ্য করা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে যে, পাকিস্তানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় কিরানা পাহাড়ের একটি পারমাণবিক সংরক্ষণাগারকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। স্যাটেলাইট ছবিতে সারগোধার মুশাফ বিমানঘাঁটির ক্ষতি দেখানোর পর এই দাবিগুলি আরও জোরাল হয়েছে। জানা যাচ্ছে ওই বিমানঘাঁটির কাছেই কিরানা পাহাড়ের নীচে ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক সংরক্ষণাগারের সাথে যুক্ত একটি সুরঙ্গের মুখেও বিস্ফোরণ হয়। যার ফলে ওই পারমানবিক অস্ত্রভাণ্ডার প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই দাবি আরও জোরাল হচ্ছে এই কারণে, সম্প্রতি মার্কিন জ্বালানি-নিউক্লিয়ার জরুরি সহায়তা বিমান পাকিস্তানে অবতরণ করেছে। যার নম্বর হল B350 AMS, এটি বিভিন্ন ফ্লাইট ট্র্যাকার ওয়েবসাইটের দ্বারা প্রকাশিত ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটাতে দেখা গিয়েছে ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিণ্ডির আশেপাশে উড়ছে। তার পরেই পাক পারমানবিক ঘাঁটিতে হামলার তত্ত্ব আরও জোরাল হয়েছে। অন্যদিকে আরও একটি তথ্য সামনে এসেছে। বিভিন্ন ফ্লাইট ট্র্যাকার ওয়েবসাইটের দ্বারা প্রকাশিত ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটাতে দেখা গিয়েছে মিশরীয় বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন বিমান চিন থেকে পাকিস্তানে এসে পৌঁছেছে। যার নম্বর EGY1916.11। বিমানটি ১১ মে বিকেলে পাকিস্তানে অবতরণ করে। জানা যাচ্ছে, ওই মিশরীয় সেনার ওই পরিবহন বিমানে বিপুল পরিমান বোরন রয়েছে। এই রাসায়নিক উচ্চ মাত্রার পারমানবিক বিকরণ শোষন করতে সক্ষম। উল্লেথ্য, ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চোরনাবিল পারমানবিক চুল্লির দুর্ঘটনার পর এই বোরন-১০ কাদামাটি এবং সিসার মিশ্রন দিয়ে ঢাকা হয়েছিল। এবারও কি পাকিস্তানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ শুরু হয়েছে। এই আশঙ্কা আরও জোরাল হয় যখন পাকিস্তানের নির্দিষ্ট এলাকায় ঘনঘন ভূকম্প অনুভুত হওয়ার পর। এই নিয়ে গত তিন দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার বার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পাকিস্তান। এর আগে প্রথম ভূমিকম্প হয়েছিল গত ১০ মে। সে বার কম্পনের মাত্রা ছিল বিখটার স্কেলে ৫.৯। ফলে কেন পাকিস্তান দ্রুত সংঘর্ষ বিরতির বার্তা দিল ভারতকে এবং কেনই বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহ সংঘর্ষ বিরতি করানো নিয়ে সেটা এখন পরিস্কার হচ্ছে। কারণ, পাকিস্তানের পারমানবিক কেন্দ্র ও অস্ত্রভাণ্ডারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখাশোনা করে মার্কিন সংস্থা। ফলে ভারত শুধু পাকিস্তান নয়, তীব্র আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্রের অহংকারেও।
Discussion about this post