৭৭তম সেনা দিবস উপলক্ষে মহারষ্ট্রের পুণে শহরে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ওই অনুষ্ঠানে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, “আগামী দিনে সংঘাত এবং যুদ্ধ আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। তা হবে আর বেশি আকস্মিক। রাজনাথ সিংয়ের এহেন মন্তব্যের পর তুমুল চঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে কূটনৈতিক মহলে”। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি আগামীদিনে কোনও বড় যুদ্ধের আশঙ্কা করছে ভারত? কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, বর্তমানে বাংলাদেশের থেকে মুহুর্মুহূ যুদ্ধের হুমকি আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বা বিজিবি রীতিমতো পায়ে পা লাগিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধানোর চেষ্টায় রয়েছে। বিএসএফ যদি একটা ভুল করে, তাহলেই যে কোনও সময় বড় ধরণের সংঘাত বেঁধে যেতে পারে দুই পড়শি দেশের। এই আবহে ভারতের তরফে পরপর দুটি কড়া বার্তা এল। প্রথমটি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে। দ্বিতীয়টি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তরফে। দুটি বার্তাই যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া হল, তা বুঝতে কারও বাকি নেই।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এমন সময় এই মন্তব্য করলেন যখন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। রাজনাথ অবশ্য বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, জঙ্গি সংগঠনগুলিকে নিয়েও সাবধানবাণী শুনিয়েছেন। তাঁর কথায়, বিভিন্ন ‘নন-স্টেট অ্যাক্টর্স’ নিয়েও দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন রাজনাথ, যারা বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। রাজনাথের মতে, এই ধরনের বিষয়গুলি ‘অত্যন্ত উদ্বেগের’ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও এর জন্য সতর্ক থাকতে হবে বলে জানান তিনি।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মঘ্যে যে নতুন রসায়ন তৈরি হচ্ছে, তা ভারতের পক্ষে খুব একটা স্বস্তিদায়ক হবে না আগামীদিনে। বিশেষ করে মুহাম্মদ ইউনূসের এই পাঁচমাসের আমলেই শতাধিক জঙ্গি জেলের বাইরে চলে আসা। পাশাপাশি, বিগত সময়ে জঙ্গি কার্যকলাপ এবং অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের জেলমুক্তিও চিন্তায় রাখছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশের সামরিক শক্তি কম হওয়া সত্বেও বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী ভারতকে উস্কানি দেওয়ার সাহসও ভাবাচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্সিগুলিকে। সে কারণেই রাজনাথ সিং সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলছেন বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে একটা বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামানের বিরুদ্ধে আরও দুটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি লেফটেন্যান্ট জেনারেল শাহীন উল হকের গ্ৰুপ এবং অন্যটি হল লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফইজুল রহমানের গ্ৰুপ। তিনটি গ্রুপই এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সচেষ্ট। এদের মধ্যে কেউ ইউনূসকে সমর্থন করছে, কেউ আবার আওয়ামী লীগের সমর্থক। কোনও গ্রুপ আবার ইসলামী মৌলবাদীদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কার্যত তিনটি অক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সূত্রের খবর, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান চাইছেন, বাংলাদেশ সেনার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে। কারণ, তিনি জানেন সেনাবাহিনীর মধ্যে যদি একটা ঐক্যের আবহ না রাখা যায় তাহলে ভারত ও আরাকান আর্মির দিক থেকে যে কোনও সময় আঘাত আসতে পারে। কিন্তু বাকি দুটি গ্রুপ নিজেদের কর্তৃত্ব পুরোপুরি জারি করতে সচেষ্ট। বিশেষ করে ইসলামিক শক্তির দ্বারা পরিচালিত সেনাকর্তারা চাইছেন ওয়াকার-উজ-জামানকে হঠিয়ে তাঁদের কাউকে বাহিনীর মাথায় বসাতে।
আর এটা হলে ভারতের পক্ষে হুমকিই হবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। কারণ, সেক্ষেত্রে একটা যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। সেই কারণেই রাজনাথ সিং বারবার সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। ভারতীয় সেনাও বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সেনা সমাবেশ বাড়িয়ে চলেছে। যাতে যে কোনও আপাতকালীন পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রত্যাঘাত করা যায়। অপরদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও বিএসএফ-কে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে অরক্ষিত বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ বন্ধ না করতে। বিজিবি বা বাংলাদেশীরা আপত্তি জানালে বা কোনও অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হলেও বেড়া দেওয়ার কাজ বন্ধ করা যাবে না। যে কোনও মূল্যে কাজ চালিয়ে যেতে হবে বলেই নির্দেশ এসেছে। ফলে বিএসএফ-এর যে হাত বাঁধা ছিল, সেটা খুলে গেল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সবমিলিয়ে বাংলাদেশকে একটা স্পষ্ট বার্তা দিয়ে ভারত বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল যে ভারত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। ইটের জবাব পাটকেলে দিতে প্রস্তুত ভারতীয় সেনা।
Discussion about this post