বাংলাদেশে এখন চরম অস্থিরতা। গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাঁচ মাস কেটে গেলেও বাংলাদেশে নেই স্থায়ী সরকার। মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটা অন্তরবতীকালীন সরকার থাকলেও তাঁরা নিজেদের মতো করে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অপরদিকে বিএনপি দ্রুত ভোট চেয়ে সরকারকে চাপ দিলেও পিছন থেকে বিরোধিতা করছে জামাতে ইসলামীর মতো কট্টরপন্থী দলগুলো। জামাত বা অন্যান্য মৌলবাদী দলগুলি চাইছে বাংলাদেশ পুরোপুরি ইসলামিক দেশ হোক, সেই দিকেই তাঁদের যাবতীয় উদ্যোগ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা চাইছেন আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে, পাশাপাশি তাঁরা চাইছে মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিবের ইতিহাস মুছে ফেলতে। বাংলাদেশের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে করোও মাথাব্যথা নেই। এই পরিস্থিতিতে আচমকাই কয়েকটি ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে ওয়াকিবহাল মহলকে। সেটা হল, মাঝেমধ্যেই রেল স্টেশন, মসজিদ বা বিমানবন্দরের ডিসপ্লে বোর্ডে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লিগের সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান ফুটে ওঠা। যা নিয়ে এখন তুমুল শোরগোল বাংলাদেশে।
গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশ ত্যাগ করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতন হয় আওয়ামী লীগের সরকারের। এরপর কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন করানো নিয়ে নানা টালবাহানা করে চলেছে অন্তরবতীকালীন সরকার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফের নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে প্রথমসারির আওয়ামী নেতা নেত্রীরা হয় বিদেশে পালিয়েছেন, না হয় জেলে রয়েছেন। ছোট ও মাঝারি মাপের বহু নেতা হয় জেলবন্দি, না হয় অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লিগকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। একই উদ্দেশ্য জামাতের মতো দলগুলির। চাপে পড়ে আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তদারকি সরকার। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি বাঁধা দেওয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারেনি তদারকি সরকার। ফলে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ ফের নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছে। হটাৎ হটাৎ করে রেল স্টেশনে বা মসজিদের ডিসপ্লে বোর্ডে ফুটে উঠছে তাঁদের স্লোগান বা হাসিনার আগমনী বার্তা।
বাংলাদেশের কমলাপুর রেল স্টেশনের প্রধান প্রবেশ পথে যে ‘ডিসপ্লে বোর্ড’ ছিল, তাতে গত শনিবার আচমকা ফুটে ওঠে ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’ স্লোগান। ভোর ৫টা ৫৬ মিনিট থেকে ৫টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত প্রায় দু’মিনিট ধরে সেই ‘ডিসপ্লে বোর্ডে’ ভেসে ছিল এই স্লোগান। ফলে চরম বিড়াম্বনায় পড়ে তদারকি সরকার। কমলাপুর রেল স্টেশনের দায়িত্বে থাকা রেলের বিদ্যুৎ বিভাগের এক ইঞ্জিনিয়রকে সাসপেন্ড করে তড়িঘড়ি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়। এই ঘটনায় ঢাকা রেল পুলিশ থানায় মামলাও রুজু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিন জনকে চিহ্নিতও করেছে পুলিশ। শুধু কমলাপুর নয়, খুলনা রেল স্টেশনেও আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিশেষ বার্তা ফুটে ওঠে বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই একই ঘটনা ঘটে গেল এক মসজিদে। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের ফেনী এলাকার বড় জামে মসজিদের কালো রঙের এলইডি স্ক্রিনে ভেসে ওঠে সবুজ অক্ষরে লেখা ওই ‘আওয়ামী লীগের ফেরার বার্তা’! ৩০ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ২টো নাগাদ হঠাৎই ফেনী বড় জামে মসজিদের সামনে লাগানো এলইডি স্ক্রিনে ফুটে ওঠে ‘আওয়ামী লীগ আবার ফিরবে। জয় বাংলা!’ লেখা স্লোগান। স্বাভাবিকভাবেই পথচলতি মানুষ এই ঘটনা দেখে থমকে যান। মুহূর্তে মসজিদের সামনে ভিড় জমে যায়। ঘটনার কথা চাউর হতে ভিড় আরও বাড়ে। কেউ কেউ নাকি এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভও দেখান বলে দাবি করেছে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের একাংশ। প্রায় এক ঘন্টার কাছাকাছি ওই ডিসপ্লে বোর্ডে ‘আওয়ামী লীগ আবার ফিরবে। জয় বাংলা!’ লেখা দেখা গিয়েছে। তবে কে বা কারা এর জন্য দায়ী তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন।
Discussion about this post