অবাক করা বাংলাদেশীদের ধৈর্য্য, তবে এটাকে বাংলাদেশের জনগনের ধৈর্য্য বলব না অক্ষমতা বুঝতে পারছিনা। ৩০ লক্ষ্য নাগরিকের মৃত্যু,৪ লক্ষ্য বাংলাদেশী মহিলাকে ধর্ষন করার পরও, পাকিস্তানি মতাদর্শে বিশ্বাসী কয়েকজন ছাত্র যদি বাংলাদেশের জনগনকে এটা বোঝাতে পারে যে, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের যুদ্ধে, যারা পাকিস্তানের পক্ষ্যে ছিলেন তারা ঠিক ছিলেন, তো বর্তমান বাংলাদেশের জন্য সত্যিই কষ্ট হওয়ার কথা। পাকিস্তানের দালাল যারা এখন বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে, বাংলাদেশী জনগনকে এটা বোঝাতে চাইছে-ভারত তার নিজের স্বার্থে পাকিস্তানকে ভাগ করে বাংলাদেশ করেছে। তো যাদের এই পাকিস্তানি দালালদের বক্তব্য ভুল মনে হচ্ছে না, তাদের জন্য এই প্রতিবেদনটি।
বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান যখন ভাগ হয়নি তখন পাকিস্তানের ন্যাশানাল অ্যাসম্বলিতে সিট সংখ্যা ছিল ৩০০। দুই-দলের লড়াই ছিল, পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং আওয়ামি লীগ। পিপিপির তরফ থেকে লড়ছিল জুলফিকর আলি ভুট্টো আর অপরদিকে আওয়ামি লীগের পক্ষ্য থেকে শেখ মুজিবর রহমান। ভোটের ফল ঘোষনা হলে দেখা গেল, ভুট্টোর থেকে অনেক বেশী আসন পেলেন শেখ মুজিবর। ভুট্টো পেয়েছেন মাত্র ৮৬ টি আসন আর মুজিবর পেয়েছেন ১৬৭ টি আসন, যা মোট ভোটের ৪০ শতাংশ। পূর্বপাকিস্তানের জনগন খুব খুশি, কারণ এবার তাদের উন্নতি ঘটবে, তাদের অঞ্চলের নেতা দেশের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। কিন্তু যখন মুজিবর শপথ নিতে গেলেন, তখন ভুট্টো পূ্র্ব পাকিস্তানের লোকজনদের এতটাই হীন নজরে দেখতেন যে, বললেন বাঙালী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবে, তৎকালীন সেনা প্রধানের সঙ্গে মিলে, মুজিবরকে জেলে পাঠিয়ে দেন। তখন বর্তমান বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হয়। যার ফলে মুজিবরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ভুট্টো। ততখন পর্যন্ত ভারতের কোথাও কোন যোগাযোগ ছিল বাংলাদেশকে নিয়ে। কারণ মুজিবার ছাড়া পেয়ে পূর্বপাকিস্তানে ফিরে বলেছিলেন পূর্বপাকিস্তান আর পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবেনা। আমাদের আলাদা দেশ হবে, যার নাম হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে যখন স্বাধীনতার আন্দোলন চরম পর্যায়ে তখন ভুট্টো বাংলাদেশে পাঠায় টিক্কা খান নামের জেনারেলকে, যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্রুর এবং নিষ্ঠুর বললেও কম বলা হয়। কারণ টিক্কা খান বাংলাদেশে এসে অপারেশন সার্চ লাইট চালু করে। এবং নিজের দেশেরই ৩০ লাখ লোককে হত্যা করে। যার জন্য টিক্কা খানকে বুচার অফ বাংলাদেশ বলা হয়। শুধু ৩০ লাখ লোকেকে হত্যা নয়, নিজের দেশের চার লাখ মহিলাকে রেপ করিয়েছিল। টিক্কা খান এতটাই নীচ প্রবৃত্তির লোক ছিল, যা তার বক্তব্য ছিল, রেপ করার ফলে বাংলাদেশে যে আগামী পীড়ি জন্ম নেবে তাদের মানসিকতা পাকিস্তানের সঙ্গে মিল খাবে, তারা আর কখনও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যাবে না। এই ধরণের বর্বরতার পর, বহু বাংলাদেশী মানুষ ভারতে চলে আসে, বাংলাদেশ স্বাধীন করার লক্ষ্য নিয়ে । আর যাদের নিয়ে গঠিত হয় মুক্তি বাহীনি। আর সেই মুক্তিবাহীনিকে খোলা সমর্থন দেয় ভারত। সব রকমের সহযোগীতা দেওয়ার সঙ্গে সামরিক সহয়তাও দেয় ভারত। আর সেই যুদ্ধে ভারত শুধু রক্তই দেয়েনি বাংলাদেশের জন্য, নিজের দেশকে শত্রু করে তোলে গোটা পৃথিবীর কাছে। যেখানে রাশিয়া ভারতের পাশে না থাকলে, ভারতের অস্তিত্বই থাকত কিনা সন্দেহ। আর আজ কোথা থেকে পাকিস্তানি দালালরা বলছে ভারত নিজের স্বার্থে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে বানিজ্য বিস্তার করছে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ রফতানি করা ছাড়া আর কিছু আছে কি। কি উৎপাদন হয় পাকিস্তানে। বিভিন্ন দেশ থেকে যা সব পন্য পাকিস্তানে যায়, তা তারা বাংলাদেশের থেকে দ্বিগুন অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশকে দেবে। হাসিনার একটাই ভুল ছিল, হাসিনা দেশের উন্নতি করতে চেয়েছিল,তাই ভারত চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সমতা বজায় রেখে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। যেটা অনেক পাশ্চাত্য দেশের কাছেই হাসিনাকে পতনের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করতে বাধ্য করিয়েছিল। তবে এটাও ঠিক ভারতের কিছু দুর্বলতা আছে বাংলাদেশ নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশেরও মনে রাখা উচিৎ যে সময় বাংলাদেশকে স্বাধীন করে বিনা স্বার্থে সম্পূর্ণ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই সময় আর সেই প্রধানমন্ত্রী এখন আর নেই। আর আমেরিকাতেও আগের সরকার নেই, ট্রাম্প আসার পর, অনেক কিছুই বদল হবে। এখন দেখার কোন কোন দেশের জন্য আমেরিকার সরকার বদল কোন পরিস্থিতির বদল ঘটায়।
Discussion about this post