ছাত্র আন্দোলনের জেরে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে হয়েছে এমন নজির ইতিহাসে খুঁজলে পাওয়া যায়। সম্প্রতি সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেনা শাসনে রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সেনাপ্রধানের দাবি, আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়ে যাবে। যার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সেনাপ্রধান সাংবাদিক সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছেন একটি বৈঠক ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি দল আওয়ামী লিগ বাদ দিয়ে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়েই হয়েছে সেই বৈঠক। মূলত বিএনপি, জামায়তে ইসলামী এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ছিল সেই বৈঠকে। ফলে ধরে নেওয়াই যায় এবার অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালিত হবে বিরোধী শক্তি দ্বারা। এখন প্রশ্ন হল বাংলাদেশে গণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এই তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, বাংলাদেশী জনতা একজন বিশিষ্ট মানুষকেই চাইছেন সেই পদে। ফলে বেশ কয়েকটি নাম ভেসে আসছে। যারমধ্যে অন্যতম নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুস।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরি হোক। সূত্রের খবর তিনিও নাকি রাজি হয়েছেন এই দায়িত্ব নিতে। মঙ্গলবার ভোররাতে এক ভিডিওতে এই রূপরেখার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। ওই ভিডিও বার্তায় নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবের জন্য তাঁরা ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলেন। জরুরি পরিস্থিতিতে তাঁরা এখনই একটি রূপরেখা ঘোষণা করছেন। তিনি আরও বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। তিনি ছাত্র–জনতার আহ্বানে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে এই গুরুদায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন।
ওই ছাত্র নেতা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত মুক্তিকামী ছাত্র–জনতাকে রাজপথে থেকে তাঁদের অভ্যুত্থান রক্ষা করতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গঠন করার জন্য তাঁদের যে প্রতিশ্রুতি, সেটা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। অবশ্যই ছাত্র–জনতার প্রস্তাবিত সরকার বাদে অন্য কোনও ধরনের সরকার মেনে নেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ডঃ মুহাম্মদ ইউসুফ। তাঁকে ওই সম্মান দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে তাঁর তৈরি মাইক্রোফিন্যান্স ব্যাঙ্কের জন্য। নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয় হলেও বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়। হাসিনা বরাবরই প্রকাশ্যে ইউসুফের সমালোচনা করেছেন। ইউসুফের সংস্থা গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে গত জানুয়ারি মাসে ইউনুসকে ছ’মাসের জেলের সাজাও শুনিয়েছিল ঢাকার এক আদালত। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল বাংলাদেশে। যদিও হাসিনা বিরোধী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউসুফের জনপ্রিয়তা, প্রভাব এবং গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় সেই সময়। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুখ হিসেবে বেছে নিয়েছেন আন্দোলরত ছাত্ররা। মঙ্গলবার বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রতিবাদী ছাত্র সংগঠনগুলি। সেখানেই অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল।
Discussion about this post