কথায় আছে, বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী। অর্থাৎ কিনা যে দেশ তার বাণিজ্য নীতিতে সফল হয় সেই দেশের আর্থিক বিকাশ ততোই ভালো হয়। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে সাম্প্রতিক শীতলতা বাণিজ্য ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য। গত ৮ এপ্রিল ভারত সরকারের তরফে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হয়। এই সংবাদ জানার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে প্রথমে দাবি করা হয়েছিল এতে বাংলাদেশের খুব একটা অসুবিধা হবে না। কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই স্বীকার করতে বাধ্য হল ভারত এই সুবিধা বাতিল করার তাদের উপর বাড়তি ২০০০ কোটি টাকা বোঝা চাপছে। আর স্বভাবতই এর প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক বাণিজ্যে।
গত বুধবার বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহন খরচ দুই হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। তবে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছি তাতে এ খরচ শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনব।
উল্লেখ্য, ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করে কলকাতা বা দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে অনেক কম খরচে বাণিজ্য করতো বাংলাদেশের শিল্প সংস্থাগুলি। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এই সুবিধা ভারত দিয়েছিল নিজের পেট কেটে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে এই সুবিধা দেওয়ার ফলে ভারতীয় শিল্প কিছুটা হলেও পিছিয়ে যাচ্ছিলো প্রতিযোগিতা থেকে। বিশেষ করে রেডিমেড পোশাক শিল্প। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার কোন উদ্যোগই নেয়নি। উল্টে উপদেষ্টা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন নেতৃত্ব এবং কট্টরপন্থী ইসলামিক নেতারা ভারতকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে গিয়েছে। কখনো ভারতের সঙ্গে চুক্তি থাকা ট্রানজিট সুবিধা বাতিলের কথা বলে এসছে, মংলা বন্দর নিয়ে চীনকে আশ্বাস দেওয়া, লালমনিরহাট বিমান ঘাঁটি নির্মাণের চীনকে আহবান করা, পাকিস্তানের সঙ্গে মাখামাখি সম্পর্ক তৈরি করে ভারতকে বার্তা দেওয়া। এর কোনটাই ভারত সরকার ভালোভাবে মেনে নেয়নি। ভারতের পোশাকশিল্প-সহ অন্যান্য কয়েকটি শিল্প সংস্থার তরফে বারবার দাবি করা হচ্ছিল বাংলাদেশকে ট্রান্সমিট্মেন্ট ফেসিলিটি দেওয়া বন্ধ হোক। কলকাতা বা দিল্লী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও আপত্তি জানাচ্ছিলো এই ব্যাপারে। ফলে ভারত বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রসঙ্গত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
বোঝাই যাচ্ছে ভারতের স্পষ্ট ইঙ্গিত বাংলাদেশের বাণিজ্য নীতি ও সে দেশের নেতৃত্বের ভারতবিরোধী মন্তব্য নিয়ে। যা ভারত সরকার কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। অন্যদিকে ভারতকে শায়েস্তা করতে গিয়ে কার্যত নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারলো বাংলাদেশ। সম্প্রতি ভারত থেকে সুতো আমদানি নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মহলে চরম ক্ষোভ সামনে আসছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এমন জোরালো পদক্ষেপের কারণে পোশাক শিল্পে বিরাট ধাক্কা খেতে পারে ওপার বাংলার ব্যবসায়ীরা।
সবমিলিয়ে বলা যায়, বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ হলেও মুহাম্মদ ইউনূস শুধুমাত্র ভারত বিরোধীতার জন্যই বাংলাদেশকে শত বছর পিছিয়ে দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বার্তায় বারবার দাবি করছেন তিনি বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। দেশে শিল্প ও কলকারখানা প্রভূত উন্নতি হচ্ছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতি তড়তড়িয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতায় আসার পর দেশজুড়ে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে বন্ধ হয়েছে একের পর এক রেডিমেড পোশাকের কারখানা। যে কয়টা টিমটিম করে চলছিল, স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ হওয়ায় তারাও প্রবল সংকটের মুখে পড়ল। পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি সুতো কলগুলো কার্যত বন্ধের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। কারণ ভারত থেকে স্থলবন্দর হয়ে যে শুধু আমদানি হতো, এবার সমুদ্রপথে তা আমদানি করতে কেজি প্রতি এক থেকে দেড় ডলার বাড়তি খরচ পড়বে। ফলে বাংলাদেশের শিল্প ভবিষ্যৎ ঘর অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।
Discussion about this post