সদ্য পার হল বাংলাদেশের বিজয় দিবস। প্রত্যেকবার এই দিন বাংলাদেশে মহা সাড়ম্বরে পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু এইবার প্রেক্ষাপটটা একেবার আলাদা। সরকার বদল হয়েছে। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। অশান্ত রয়েছে বাংলাদেশ। দিকে দিকে বিক্ষোভ, আরাজকতা। এমন জায়গায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি পৌঁছেছে যা আন্তজার্তিক মহলে কেবল আলোচনায় পদ্মাপাড়ের। তারমাধ্যে বিজয় দিবস পালন হল সেখানে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে পরাস্ত হয়েছিল পাকিস্তানি সেনা। কার্যত আত্মসমর্পণ করেছিল তারা। সেই ঘটনার পর বাংলাদেশে হয়েছিল স্বাধীন। সেই দিনের কথা স্মরণ করেই বিজয় দিবস পালন হয়। এদিন বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ভারতে আসেন বাংলাদেশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহম্মদ আমিনুর রহমান এবং তাদের পরিবার। রাজভবনে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের উপস্থিতিতে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হল। এমনকি ১৯৭১ সালের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অভসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তাও। বিজয় দিবসের প্রসঙ্গ তো রয়েছেই। তবে বাংলাদেশ এখন ঠিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেই কথাও উঠল এদিন।
তবে ভারতে পা দিয়েই তারা মৈত্রীর কথা বললেন। কোনও হিংসা, সমালোচনার কথা শোনা গেল না। বলা হল বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা এবং রাজনৈতিক বিষয়। তারা মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যেন কোনও প্রভাব না পড়ে। পাশাপাশি সে দেশের সংখ্যালঘুদের উপর যে লাগাতার অত্যাচারের কথা সামনে আসছে, তা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়াও তারা উল্লেখ করেন, সে দেশে চলছে, তা কিছু রাজনৈতিক বিষয়।
তবে আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে মুক্তি যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের অবদান ছিল লক্ষণীয়ভাবে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের যে অবদান ছিল তাও অস্বীকার করার নয়। ইতিহাস ঘাঁটলে তা বোঝায় যায়। কিন্তু এদিন বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে বিজয় দিবসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের অবদান কোনওভাবেই স্মরণ করেননি। কিন্তু ভারতে আসা মুক্তিযোদ্ধারা তা অবশ্য করেননি। তারা মনে করেন, তাদের দেশ স্বাধীন হতে সাহাষ্য করেছিল পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতীয় সেনারা। এমনকি, দু দেশের মধ্যে দীর্ঘ বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে তারা। তবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি নিয়ে খুব সাবধানী ছিলেন তারা। সেই নিয়ে বিশেষ কোনও মন্তব্য করেননি আমিনুর রহমান।
মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গির কবীর বাংলাদেশের ঘটে চলা কিছু পরিস্থিতি গোটা দেশের পরিস্থিতি হিসাবে মানতে নারাজ। এই সমস্ত ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। যা হচ্ছে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা বন্ধ করার জন্য চেষ্ট হবে। এমনটাই জানান। অর্থাৎ, বলাই বাহুল্য ভারতকে তারা মিত্র ভাবলেও পদ্মাপাড়ের পরিস্থিতিতে কিছুটা অস্বীকার করছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নয় বলে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন তারা।
মুক্তিযোদ্ধা মহম্মদ আলি আশরাফ বলছেন, প্রায়ই তিনি মরে যাচ্ছিলেন। দেহে পাঁচটি গুলি লেগেছিল। অনেক রক্তের বিনিময়ে দেশ পেয়েছি। ব্রিটিশরা ভাগ করেছে। কিন্তু আশলে আমারা প্রত্যেকে এক।
মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে ঐক্যের কথা শোনা গেলেও সে দেশে লাগাতার হয়ে চলা সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কেন তারা চুপ, এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে অনেকে। যদিও রাজ্যপাল সেদিন জানান, ভারত বাংলাদেশ নয়, গণতন্ত্রের জয় হয়েছিল সেদিন।
Discussion about this post