যেখানে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় এখনও জেলে সন্নাসী চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভু। সেখানে একের পর এক সন্ত্রাসীকে জেলমুক্তি দিচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার। শুধু সন্ত্রাসী নয়, বলা ভালো এককালে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত একের পর এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে মুক্তি দিচ্ছে ইউনূস সরকার। তালিকাটা বেশ দীর্ঘ হয়ে চলেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি রহমানি হাফি। এবার মুক্তি পেলেন গ্রেনেড হামলার অভিযোগে জেলবন্দি বিএনপি-র আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। প্রায় ১৭ বছর পর মঙ্গলবার দুপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি বের হলেন এবং কার্যত বীরের সম্মান পেলেন।
বাংলাদেশ মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ২১ অগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শেখ হাসিনার সভায় গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। এই হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন। আহত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের তিনশোরও বেশি নেতা-কর্মী। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ঢাকার ফাস্ট ট্র্যাক আদালত ১ এই মামলায় মোট ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। যার মধ্যে ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু। অপরদিকে, খালেদাপুত্র তারেক রহমান-সহ ১৯ জনের হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছিল। যদিও খালেদা পূত্র তারেক রহমান সেই সময় থেকেই বিদেশে থাকায় তাঁকে জেলে পাঠানো যায়নি। তবে ১৭ বছর কারাবন্দি থাকার পর একে একে ওই মামলায় সাজা মুকুব হয়ে গেল লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টুদের খালেদাপুত্রকেও এই মামলায় আগেই মুক্তি দিয়েছিল আদালত। ফলে প্রশ্ন উঠছে, মুহাম্মদ ইউনূসের আমলে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাও কি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়েছে?
বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টুর বিরুদ্ধে শুধু শেখ হাসিনার সভায় গ্রেনেড হামলার অভিযোগই ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে ছিল সন্ত্রাসবাদী সংস্গঠনগুলিকে মদত ও অর্থসাহায্যের মতো গুরুতর অভিযোগও। এই বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। যার অর্থ বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার দায়িত্ব। কিন্তু তিনি রীতিমতো পাকিস্তান ভিত্তিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে অর্থায়ন করতেন। যেমন, হরকত-উল-জিহাদি-আল-ইসলামি বা হুজি। এই জঙ্গি সংগঠনকে তিনি ভারতে নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানোর জন্য সরাসরি অর্থ সাহায্য করতেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রী থাকাকালীন মাদ্রাসাগুলি থেকে তরুণদের চিহ্নিত করে আব্দুস সালাম পিন্টু পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি শিবিরগুলিতে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করতেন। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে ওই শিবিরগুলি জঙ্গি নিয়োগ করতেন। তবে শুঘু ভারত নয়, এই বিএনপি নেতা ইজরায়েল, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, আমেরিকার মতো দেশেও নিষিদ্ধ ছিলেন।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে এমন সব আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের কেন মুক্তি দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার? তাহলে কি আরও বড় কোনও চক্রান্তের জাল বুনছে বাংলাদেশের তদারকি সরকার। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাংলাদেশে তদারকি সরকার ক্ষমতায় আসার পর যেমন একের পর এক শীর্ষ জঙ্গিদের জেল থেকে ছেড়ে দিচ্ছে, তেমনই কয়েকশো গুরুতর অপরাধী ও জঙ্গি জেল ভেঙে পালিয়েছে। সবলিমিয়ে বাংলাদেশ এখন জঙ্গিদের আতুরঘর হয়ে উঠেছে। আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই সময় থেকেই পশ্চিমবঙ্গ ও আসমে জঙ্গি কার্যকলাপ বেড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি অসম ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ত ফোর্স যৌথভাবে ৮ আনসারুল্লা বাংলা টিমের জঙ্গিকে আটক করেছে। তাঁদের জেরা করেই জানা যাচ্ছে ভয়ানক সব তথ্য। বাংলাদেশে তদারকি সরকারের আড়ালে কট্টর মৌলবাদী সংগঠন ও জামাতের মতো দল কার্যত ক্ষমতায় এসে বসেছে। সেই সঙ্গে আনসারুল্লা বাংলা টিম, হিজবুত তেহরি, জেএমবি, হুজির মতো কট্টর জঙ্গি সংগঠনগুলি নিজেদের জাল বিস্তার করে চলেছে। তাঁদের মদত দিচ্ছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। যদিও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এবং বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যগুলির পুলিশ, এসটিএফ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তে তীব্র নজরদারি চালাচ্ছে বিএসএফ। ভারতীয় সেনাও হাই অ্যালার্টে রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, খুব শীঘ্রই ভারত বড় কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে।
Discussion about this post