গোটা বিশ্বে এখন একটাই চর্চা, তা ভারতের অপারেশন সিঁদুর নিয়ে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই বিশেষ সামরিক অভিযানে পাকিস্তানের কোমর কার্যত ভেঙে গিয়েছে। আর তার প্রভাব গিয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। তড়িঘড়ি সন্ত্রাস ইস্যুতে বড়সড় পদক্ষেপ নিল ইউনূস সরকার। সেদেশে সন্ত্রাস ইস্যুতে এল নয়া আইনি বিধান।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে যে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তার বদলা নিতে বধ্যপরিকর ছিল ভারত সরকার। এর পিছনে যে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী সংগঠন রয়েছে তার প্রমান মিলতেই বদলার রূপরেখা তৈরি করে মোদি সরকার। ভারতীয় সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয় সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করার ব্যাপারে। এরপরেই পহেলগাঁও হামলার ১৫ দিনের মাথায় পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় পরিকল্পিত এবং পরিমিত হামলা চালায় ভারতীয় সেনা, যার নাম দেওয়া হয়েছিল অপারেশন সিঁদূর। এই সেনা অভিযানে পাকিস্তানের মাটিতে ঘাঁটি গাড়া জৈশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবা, হরকত-উল-মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি সংগঠনগুর সদর দফতর-সহ একাধিক ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারত। এর পরবর্তী তিন-চার দিন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়া এবং পাকিস্তানের একাধিক সেনা ও বিমানঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা এখন সবাই জানেন। ভারতীয় সেনা পরিচালিত অপারেশন সিঁদূরের অভিঘাত যে কতটা ছিল, সেটা টের পেয়েছে বিশ্বের বহু দেশ। ভারতের উদ্দেশ্য এবং প্রত্যাঘাতের ধরণ দেখেও বহু দেশের চোখ ছানাবড়া হয়েছে। এই আবহে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে। পাকিস্তানের বুকে তীব্র কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়া ‘অপারেশন সিঁদুর নাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকেও। ফলে তড়িঘড়ি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তদারকি সরকার এক অধ্যাদেশ জারি করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাস ইস্যুতে নিয়ে এল নয়া আইনি বিধান। বর্তমানে কূটনৈতিক আঙিনায় পাকিস্তানের সঙ্গে বিশেষ সখ্যতায় থাকা বাংলাদেশের ইউনুস সরকার বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী সংশোধনী অধ্যাদেশ জারি করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি, সত্ত্বা বা সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হল। গত রবিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই নয়া বিধানের খসড়া অনুমোদনের পর রাতেই অধ্যাদেশ জারি করা হয়। বর্তমান আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। উল্লেখ্য আগে এই নিষিদ্ধ করার বিধানটি ছিল না। যা এবার যুক্ত করা হল। নয়া অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা যাবে। এ ছাড়া তাঁদের পক্ষে বা সমর্থনে যে কোনও প্রেস বিবৃতির প্রকাশনা বা মুদ্রণ কিংবা গণমাধ্যম, অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য যে কোনও মাধ্যমে যে কোনও ধরনের প্রচারণা নিষিদ্ধ করা যাবে। আবার সেই সংগঠনের মিছিল, সভা-সমাবেশ বা সংবাদ সম্মেলন আয়োজন বা জনসম্মুখে বক্তৃতা দেওয়াও নিষিদ্ধ করা যাবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা যদিও দাবি করছেন, এই নয়া অধ্যাদেশ আওয়ামী লীগকে ঠেকাতেই জারি করা হয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের ওপর ভারতের এই ভয়ানক প্রহারের ছবি দেখে আতঙ্কিত। কারণ, ভারত বহুবার বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে জঙ্গি ও জেহাদি কার্যকলাপ দমন করার ব্যাপারে। ফলে নরেন্দ্র মোদি সরকার যদি পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও এবার জঙ্গি ও জিহাদি কার্যকলাপ নির্মূল করার জন্য অপারেশন সিঁদূর পরিচালনা করে, তাহলে সেটা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। তাই আওয়ামী লীগের আড়ালে এই নতুন সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ জারি করে ভারতকে পরোক্ষে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন মুহাম্মদ ইউনূস। এখন দেখার, এই নয়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ সে দেশের জঙ্গি সংগঠন বা শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতার বা নিষিদ্ধ করে কিনা।
জুন ও জুলাই বিপ্লবের সময় বাংলাদেশে কতজন পুলিশ কর্মী ও আধিকারিকের মৃত্যু হয়েছে, সেই ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা আজও প্রকাশ...
Read more
Discussion about this post