গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে পালাবদলের পর থেকে এক অদ্ভুত নৈরাজ্য চলছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসক মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি একজন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এবং নোবেলজয়ী অধ্যাপক কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ক্রমাগত ভারতকে উস্কানি দিয়ে চলেছেন। বিগক আট-নয় মাসে তিনি বাংলাদেশের জন্য উন্নতির কতটা চেষ্টা করেছেন অথবা উন্নতির রূপরেখা দিতে পেরেছেন তার হিসেবনিকেশ করা সম্ভব নয়, কিন্তু তিনি যে বাংলাদেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছেন, সেটা অনেকেই মেনে নিচ্ছেন। বিগত আট-নয় মাসে বাংলাদেশে কট্টরপন্থী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের বাড়বাড়ন্ত মূলত তাঁরই কারণে হয়েছে। কারণ, তিনি ক্ষমতায় আসার পরই বাংলাদেশে একের পর এক শীর্ষ জঙ্গি নেতা জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে সমস্ত দায়মুক্ত হয়ে। এমনকি বিগত কয়েকমাসে বাংলাদেশে জিহাদি ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি এবং কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠনগুলি তাঁদের কার্যকলাপ বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের তদারকি সরকার সেটা দেখেও না দেখার ভান করে চলেছে। মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে যতটা দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন, ঠিক ততটাই এখন তিনি পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছেন। আবার কৌশলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও যোগসাজস তৈরি করে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আরাকান আর্মিকে একটা মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। আর সেটা তিনি করেছেন কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করেই। অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা বর্তমান জাতীয় নাগরিক পার্টির আবদারে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে ফেলেছেন। ফলে তিনি যে বাংলাদেশকে এক বিশৃঙ্খল ও ভয়াবহ পরিবেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন সেটা প্রায় পরিস্কার। কারণ, বাংলাদেশের আর্থিক বিকাশের দিকে নজর না দিয়ে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি নিজের আখের গোছানোর কাজ করে চলেছেন। এমনটাই মনে করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
এবার প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশে এত কিছু হচ্ছে তবুও ভারত সেভাবে কেন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না? যেখানে পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার ১৫ দিনের মাথায় পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে ভারতীয় সেনা সেখানকার জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে কার্যত ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে এসেছে। অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যেভাবে জঙ্গি ও জিহাদিদের মদত দিচ্ছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা নিয়ে ভারত সরকার অনেকবার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কূটনৈতিক চ্যানেলে। কিন্তু পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের মোদি সরকার স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করার ব্যাপারে। এর জন্য মোদি সরকার ভারতীয় সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতাও দিয়ে রেখেছে নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। যার পরিণতি টের পেয়েছে পাকিস্তান, অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে। তাই অনেকের মনেই কৌতুহল, তবে কি ভারতীয় সেনার পরবর্তী টার্গেট বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদীরা?
এই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। প্রথমত অতি সম্প্রতি একদিনের কলকাতা সফরে এসেছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। অপারেশন সিঁদূর এবং ভারত-পাক সংঘর্ষ বিরতির পর তিনি অতি গোপনে কলকাতায় এসেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে। তবে তিনি কাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং পুলিশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনও বৈঠক করেছেন কিনা জানা যায়নি। কিন্তু অজিত ডোভাল কলকাতা সফরে আসার আগে বাংলাদেশের পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন বলেও খবর। জানা যাচ্ছে, ভারতের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলি জানতে পেরেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে অন্তত ৩৭ জন জঙ্গি চুপিসারে ভারতে প্রবেশ করেছিল পশ্চিমবঙ্গের কাঁটাতাঁরবিহীন সীমান্ত দিয়ে। এরপর তাঁরা দ্রুত নেপালে প্রবেশ করেছে। আপাতত ওই জঙ্গিদল ফের ভারতে প্রবেশ করার জন্য তৈরি। তাঁরা যে বড় কোনও নাশকতার পরিকল্পনা করছে সেটা বলাই বাহুল্য। মনে করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এজেন্সিগুলির থেকে এই খবর পাওয়ার পরই কলকাতায় এসেছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এও জানা যাচ্ছে, গত দুই-একদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। তাতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটির সদস্যরা। তবে এই বৈঠক নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে সঙ্গত কারণেই। গোপন সূত্রে যে টুকু জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর অজিত ডোভাল প্রথমে দেখা করেন পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পর নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি বা সিসিএস বৈঠক ডেকেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। অর্থাৎ, পাকিস্তানের পর ভারত যে বাংলাদেশ নিয়েও বড় কিছু ভাবছে, এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক মহলের একাংশ। আসলে এই আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছেন স্বয়ং মুহাম্মদ ইউনূস। পাকিস্তান পুরোপুরি পর্যদুস্ত হওয়ার পরও তিনি ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে চলেছেন। এমনকি চিনের থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা-সহ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চুক্তিও সামনে আসছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে জিহাদি ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি কর্তৃত্ব স্থাপন করার পর বাংলাদেশ ভারতের কাছে ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। তাই এবার নরেন্দ্র মোদির টার্গেট বাংলদেশ।
Discussion about this post