সম্প্রতি বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৮ জঙ্গিকে পাকরাও করেছে অসম ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। ধৃতদের কাছ থেকে অতি ভয়ঙ্কর কিছু কাগজপত্র ও তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। যার মধ্যে বিশেষভাবে নজর কেঁড়েছে একটি খতম তালিকা। বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠী আনসারুল্লা বাংলা টিম, যারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাগী সংগঠন আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা হিসেবে পরিচিত। তাঁরা ভারতে ধৃত জঙ্গিদের কাছে একটি তালিকা দিয়েছিল। যাতে ভারতের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম পেয়েছে গোয়েন্দারা। এসটিএফ কর্তাদের দাবি, এই তালিকায় চোখ বুলিয়ে তাঁদের চোখ কপালে উছেছে। কারণ, ধৃত জঙ্গিদের প্রাথমিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যে তাঁরা এই তালিকা ধরে ধরে একেকজনকে খুন করে এলাকা অশান্ত করে তুলতে। পাশাপাশি ধর্মীয় নেতাদের খুন করে এলাকায় এলাকায় দাঙ্গা বাঁধানোর ব্লুপ্রিন্টও তৈরি করা হয়েছিল বলে জানতে পারছেন এসটিএফ গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যেই এই তালিকায় উল্লেখযোগ্য নাম হিসেবে শুভেন্দু অধিকারির নান জানা যাচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, যত সমস্যা তৈরি হচ্ছে সিম কার্ড নিয়ে। কারণ সীনান্তবর্তী এলাকাগুলিতে সিমকার্ড ব্যবহার করলে সঠিক লোকেশন ট্রাক করা যায় না। যেমন কেউ যদি বাংলাদেশী সিমকার্ড নিয়ে ভারতে এসে সীমান্তের ৫ থেকে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে কথা বলে তাহলে সেই সিমকার্ড দিব্বি কাজ করবে। ফলে টাওয়ার লোকেশন সেভাবে ট্রাক করা যাবে না, াবার অনেক সময় ভারতীয় টাওয়ার দেখাবে। এটাই মূল সমস্যা। ফলে বাংলাদেশী জঙ্গীরা এখন এই পদ্ধতিতে কাজ করছে। আর এ ক্ষেত্রে বিএসএফের হাত পা কার্যত বাঁধা হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে গোয়েন্দারাও অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। আবার পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদা ও নদিয়া জেলায বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে কার্যত বেসামাল বিএসএফ। কারণ এই এলাকাগুলিতে বেশিরভাগই জলভূমি রয়েছে। ফলে এই তিন জেলার সীমান্তে প্রায় ২০ শতাংশ এলাকায় যেমন কাঁটাতার নেই, তেমনই নজরদারি চালানো কার্যত অসম্ভব। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই জঙ্গিরা নিয়মিত দু-দেশে যাতায়াত করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পশ্তিমবঙ্গের দুর্নীতিবাজ ব্যাক্তিরা। তাঁদের সাহায্যে বাংলাদেশি জঙ্গিরা সহজেই ভারতীয় পরিচয়পত্র, যেমন আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করে নিচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশি হিসেবে তাঁদের চিহ্নিত করা সহজ হচ্ছে না গোয়েন্দাদের। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বিগত কয়েকমাসে বাংলাদেশিরা মুর্শিদাবাদ, নদিয়া জেলায় বেশি দামে জমি কিনছেন। এমনকি অনেকেই এসে ঘর ভাড়া নিচ্ছেন। মূলত দালালদের বেশি টাকার প্রলভন দেখিয়ে এই কাজটা সহজেই করছে তাঁরা। আর এপার বাংলার কিছু মানুষ টাকার লোভে জঙ্গিদেরও আশ্রয় দিয়ে বসছেন। ফলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাড আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম তাঁদের স্লিপার সেলকে সক্রিয় করতে শুরু করেছে বলেই জানা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ধৃত ৮ জঙ্গিকে জেরা করে ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, উত্তর–পূর্বের সাত রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্সকে অশান্ত করার ছক কষেছে আনসারুল্লা বাংলা টিম। পাশাপাশি তাঁদের টার্গেট ছিল শিলিগুড়ি করিডোরও। অপরদিকে, ধর্মীয় নেতা, রাজনৈতিক নেতাদের খতম করে বাংলা, বিহারে জাতিগত দাঙ্গা বাঁঝানোর ষড়যন্ত্রও করা হয়েছিল। এক বিশেষ ফোন অ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখত ধৃত জঙ্গিরা। তাতে পাকিস্তানের কিছু জঙ্গির যোগও ছিল। ফলে বিষয়টিকে মোটোও হালকাভাবে নিচ্ছে না ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে বিশেষ নজরদারি চালাতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। পাশাপাশি বিএসএফকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশ। কাজে লাগানো হচ্ছে টেলিকমিউনিকেশ বিভাগকেও। যাতে সীমান্ত এলাকায় টাওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি কিছুটা কমিয়ে জঙ্গিদের গতিবিধি ট্র্যাক করা যায়। আর এতেই চাপে পড়েছে বাংলাদেশি জঙ্গিরা।
Discussion about this post