সম্প্রতি ১৪০টি জনজাতিকে নিয়ে গঠিত নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য সরকার। যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ এই নতুন বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। ফলে আপাতত ভোটের মুখে ধাক্কা খেল ওবিসি বিল নিয়ে। বলা হচ্ছে, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও ধর্মভিত্তিক কোটা রাজনীতির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের কড়া অবস্থান এটি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন করে ৭৭টি ওবিসি শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল, যেগুলি আগে ২০২৪ সালের মে মাসে আদালত বাতিল করেছিল। অভিযোগ যাদের মধ্যে সিংহভাগই মুসলিম-প্রধান।
উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ ২০১০ সাল থেকে ৬৬টি সম্প্রদায়কে দেওয়া ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। এর ফলে প্রায় ১২ লক্ষ শংসাপত্র বাতিল হয়েছিল। হাইকোর্টের রায় ছিল ২০১০ সালের আগে ৬৬টি সম্প্রদায়ের ওবিসি সার্টিফিকেট বৈধ। তারপর সব শংসাপত্র বাতিল করে আদালত। উচ্চ আদালতের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়ে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। সেই মামলা সেখানে চলছে। এবার নির্বাচনের মুখে কোর্টের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তড়িঘড়ি নতুন ওবিসি তালিকা প্রকাশের অভিযোগ ওঠে রাজ্যের বিরুদ্ধে। নতুন তালিকার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ফের মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। এবার কলকাতা হাইকোর্ট একাধিক প্রশ্ন তুলে রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল।
আদালতের সেই রায় সামনে আসতেই বুধবার সোশ্যাল মাধ্যমে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এবার বিধানসভায় এবং বিধানসভার গেটে লাড্ডু বিলি করলেন বিজেপি বিধায়করা। শুভেন্দু বলেন, “ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে ওবিসি সংরক্ষণে অপব্যবহার করতে চেয়েছিল রাজ্য। বহু সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করা হয়েছিল। আদালতের রায়ে রাজ্যের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হল। তাই লাড্ডু বিলির সিদ্ধান্ত। অভিযোগ, ভোট ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে সঙ্কীর্ণ রাজনীতির খেলায় মেতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার বিধানসভায় রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কথাতেই এটা পরিস্কার। তিনি বলেন, কিছু গরিব মানুষের উপকার হতো। কিন্তু কেউ এটা মেনে নিতে পারছে না। একদল বঞ্চিত হল, আর ওরা লাড্ডু খাওয়াচ্ছে।
বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ঠিক এই কথাটাই বললেন। তাঁর কথায়, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী একজন আইনজীবী, তিনি জানেন এটা অবৈধ। তবুও তিনি ৭৬টি শ্রেণিকে ওবিসি তালিকাভুক্ত করে দিলেন কোনও সমীক্ষা ও প্রস্তুতি ছাড়া। তিনি জানতেন আদালত এটা মানবে না। তবুও তিনি করেছিলেন, মুসলিম সম্প্রদায়কে বার্তা দেওয়ার জন্য। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এবারই রাজ্যের শাসকদল কড়া প্রতিদ্বন্দ্বীতার মুখে পড়তে চলেছে। কারণ, পাহাড়প্রমান দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছে। যা নিয়ে জেরবার তৃণমূল। ভোটের মুখে তাই অনেকটাই ব্যকফুটে। সেই সঙ্গে ধর্মীয় মেরুকরণে বিজেপিও এবার অনেকটা এগিয়ে। মতুয়া থেকে শুরু করে হিন্দু ভোট টানায় বিজেপি এবার অনেকটাই সাফল্য পেতে পারে। ফলে আদালতে ধাক্কা খাবেন জেনেও মুখ্যমন্ত্রী ওবিসি বিল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। যাতে বাম ও বিজেপির করা মামলাকে দেখিয়ে পাল্টা প্রচার করতে পারেন। ফিরহাদরা ইতিমধ্যেই সেই অভিযোগ তুলতে শুরু করে দিয়েছেন।
Discussion about this post