সুপ্রিম কোর্টের রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের পর, এই রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। আদালতের নির্দেশে দুই দফার প্যানেল বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। ২০১৬ ও ২০২০ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে আদালত। এর ফলে রাজ্যের ৫৯,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি প্রশ্নের মুখে।
নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ এই রাজ্যে সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিভিন্ন সময় উঠেছে ২০১৬ ও ২০২০ সালের প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দলবাজি, নম্বর গোপন, এবং যোগ্যতাহীন প্রার্থীদের নির্বাচনের মতো অভিযোগ। এসএসসি এই অভিযোগগুলি তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই কলকাতা হাইকোর্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, এসএসসি মামলার মতো ২০২৩ সালে ৩২০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই রায়ের পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ সেই রায় পরিবর্তন করেন। তৎকালীন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতির রায় বদল করে নতুন নির্দেশে জানানো হয়, আপাতত কাজ করতে পারবেন ওই শিক্ষকরা। পরে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে ওই সব শিক্ষক শিক্ষিকাদের। আর সেই মামলাই সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে এখন আবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারাধীন।
এই প্রসঙ্গে আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের মত, “এসএসসি-র তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে, বহু প্রার্থীর নথিতে দুর্নীতি করা হয়েছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মেধাতালিকায় নাম না থাকলেও তাদের নির্বাচিত করা হয়েছে।” আদালতের নির্দেশে এখন ২০১৬ ও ২০২০ এই দুই প্যানেলের বৈধতা যাচাই করা হচ্ছে। যদি প্যানেল বাতিল হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষকের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কোন প্যানেল প্রকাশ করেনি, এমনকি আদালতের নির্দেশের পরেও প্যানেল প্রকাশ করা হয়নি। পাশাপাশি এসএসসির মতোই প্রাথমিক নিয়োগেও ওএমআর শিট নিয়ে জল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রেও পর্ষদের সঙ্গে এসএসসি-র কোনও তফাৎ নেই। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও গুরুতর। কোনও ইন্টারভিউ না নিয়েই চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে আসছে।
এই ঘটনা নিয়ে শিক্ষক ও রাজনৈতিক মহলে দেখা যাচ্ছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের এসএসসি সংক্রান্ত রায় সামনে আসার পরই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
আদালতের চূড়ান্ত রায়ের ওপর নির্ভর করছে গোটা বিষয়টি। যদি প্যানেল বাতিল হয়, তাহলে নতুন করে নিয়োগ পরীক্ষা বা তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি উঠতে পারে। এদিকে, ইতিমধ্যেই শিক্ষক ইউনিয়নগুলি আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
Discussion about this post