গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকেই মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল তরুণী চিকিৎসকের। যাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ রয়েছে। যা নিয়ে উত্তাল গোটা বাংলা। সেখানেই নতুন করে উত্তেজনা। এবার অভিযোগ, সেই সেমিনার হলের একাংশ ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই সেমিনার হলের উল্টোদিকে বিশ্রামকক্ষ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাই ভাঙার কাজ চলছে। বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই দাবি করছে, প্রমান লোপাটের জন্যই ওই সেমিনার হল সংস্কারের কাজ শুরু করেছে আর জি কর হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আশঙ্কা, নানান ফরেন্সিক নমুনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এর ফলে। সিবিআই তদন্ত শুরুর আগেই ঘটনাস্থল ভেঙে ফেলা নিয়ে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলেও খবর।
তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার, ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ নিয়ে এমনিতেই উত্তাল আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পড়ুয়া এবং জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন শুরু করেছেন যথক্ষণ না প্রকৃত দোষীরা ধরা পড়ছে ততক্ষণ তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বুধবার তদন্তভার নিয়েছে সিবিআই। এদিনই আর জি কর হাসপাতালে যায় সিবিআইয়ের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ওই সেমিনার হলের একাংশ ভেঙে ফেলায় কতটা নমুনা তাঁরা সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রসঙ্গত, ঘটনার পর থেকেই আর জি কর হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন আচরণ সন্দেহজনক। বিশেষ তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখেও তা আত্মহত্যা বলে দাবি করা। মৃতার পরিবারকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা এবং মৃতদেহ দেখতে না দেওয়া। দ্রুততার সঙ্গে দেহ ময়নাতদন্ত সেরে ফেলা। এর সর্বশেষ উদাহরণ, সেমিনার হল ভেঙে নতুন নির্মান শুরু করা। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের দাবি, কাউকে আড়াল করতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকে সচেষ্ট।
রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে এর আগেও তথ্যপ্রমান লোপাটের গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। কামদুনি গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনাতেও পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তা এবং প্রমান লোপাটের অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় সিআইডি-র দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। আর জি কর মামলায় বিরোধীপক্ষের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি কলকাতা হাইকোর্টে দাবি করেছিলেন, কামদুনি কাণ্ডে যিনি সিআইডির দায়িত্বে ছিলেন, তিনি দায়িত্ব নিয়ে তথ্য প্রমান নষ্ট করেছিলেন। সেই কারণেই দোষীরা ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন। এই দাবি করেই ওই আইনজীবী বলেন, এখন বিনীত গোয়েলের তত্ত্বাবধানে তদন্ত চললে একই পরিনতি হবে। তাই অবিলম্বে বিনীত গোয়েলকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানান তিনি। আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পরই হাইকোর্ট প্রথমে কেস ডাইরি চেয়ে পাঠায়। পরে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। যদিও এই অভিযোগ আগেও উঠেছিল। সারদা তদন্তেও বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধেও তথ্য প্রমান লোপাটের অভিযোগ উঠেছিল। পরে সারদা মামলায় সিবিআই জেরাও করে রাজীব কুমারকে। এবার আর জি করেও দেখা গেল ঘটনাস্থলের কাছেই ভাঙচুর করা হচ্ছে। যাতে তথ্য প্রমান ঘেঁটে যায়।
Discussion about this post