আর জি কর কাণ্ডে সরাসরি গর্জে উঠেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দোষীদের এনকাউন্টারের নিদান দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু এই বিষয়ে দলের অবস্থান ছিল ভিন্ন। আবার মহিলাদের রাত দখলের রাতে আর জি কর হাসপাতালে যখন ভাঙচুর হলো, তখন তিনি সরাসরি ফোন করেন কলকাতার নগরপালকে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এ ক্ষেত্রেও দলের অবস্থান ছিল ভিন্ন। বিশেষত, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি আবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আর জি কর ইস্যুতে তিনিও চাপে পড়ে গিয়েছেন। দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসও চাপে পড়েছে। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুতে অনেকটাই আলাদা। কখনও গরম, কখনও নরম। আর জি কর ইস্যুত যখন গোটা রাজ্য উত্তাল, তৃণমূল কংগ্রেসে টালমাটাল অবস্থা, তখন অনেকটাই নীরব হয়ে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও প্রথমদিকে তিনি কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে একেবারেই চুপচাপ হয়ে যান।
এই বিষয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে যায়, তবে কি আর জি কর ইস্যুতে তৃণমূলে ফাটল ধরলো? যদিও একাংশের দাবি, চোখের সমস্যা নিয়ে জেরবার অভিষেক রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন। তবে জল্পনা থামেনি। এবার নতুন করে ফের চর্চায় অভিষেক, সৌজন্যে ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তিনি সরাসরি দাবি তুললেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হোক। এখানেই থেমে থাকেননি তৃণমূল বিধায়ক, তিনি অভিষেককে উপমুখ্যমন্ত্রী করে স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিও তুলে বসলেন। অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার লাঘব করতে অভিষেককে ডেপুটি করার দাবি। অবশ্য এই ধরণের দাবি এই প্রথম নয়। এর আগেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের পক্ষে জোরাল সওয়াল করেছিলেন সৌগত রায়, কুণাল ঘোষরা। ফলে, শাসকদলের অভ্যন্তরে এখন চোরাস্রোত বইছে।
দিন কয়েক আগেই ৩৮ বছরে পা দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিন অনুরাগীদের শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে যাওয়া তৃণমূলের যুবরাজ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজও সেরেছেন। এর মধ্যে অন্যতম দলের জেলা সংগঠনে রদবদলের প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া। অভিষেক ওই দিনই জানিয়েছিলেন, বিদেশ যাওয়ার আগে তিনি রদবদলের খসড়া করে দলনেত্রীর হাতে দিয়ে গিয়েছেন। বদল এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। যদিও রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, রাজ্যের ৬ বিধানসভার উপনির্বাচন মিটলেই এই রদবদল হবে। কিন্তু তার মধ্যেই একের পর এক তৃণমূল বিধায়ক এবং নেতার বিস্ফোরক দাবি একেবারে অন্যমাত্রা দিচ্ছে শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দলকে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের হাত ধরে যার সূচনা হয়েছিল। এরপর একে একে হুমায়ুন কবীর, নারায়ণ গোস্বামীদের মন্তব্য যদি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে বুঝতে হবে অচিরেই তৃণমূলের হাল অভিষেকের হাতে আসতে চলেছে। সে ক্ষেত্রে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কি অবস্থান হবে, সেটা নিয়েই চলছে জল্পনা।
সম্প্রতি অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংগ্রামের অপর নাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে একশো ভাগ নেত্রী হিসেবে মেনে চলেন। এটা নিয়ে কোথাও কোনও দ্বিমত বা সন্দেহ নেই। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে এই তৃণমূল কংগ্রেসের ভবিষ্যত হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ তিনি ভবিষ্যতের তৃণমূলের নেতা। মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি হবেন না সেটা পরবর্তী প্রশ্ন। কিন্তু, ভবিষ্যতে তৃণমূলের নেতার নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক পরবর্তী উত্তর ২৪ পরগণার দাপুটে নেতা নারায়ণ গোস্বামী অবশ্য এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, “কিছু তালেবর নিজেদের বড় মনে করছেন। আর একমাস, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব নিয়েছেন। বহু হনুমানের লেজ কাটা যাবে। তখন এই লেজ কাটা বাঁদরের দল রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবেন”। এর পরপরই আরও এক কদম এগিয়ে ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর দাবি করে বসলেন, অভিষেককে উপমুখ্যমন্ত্রী করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার। যে পদে এখন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ধীরে ধীরে তৃণমূলের অন্দরে অভিষেকের গুরুত্ব বাড়ছে। সেনাপতি থেকে এবার তাঁকে সিংহাসনে বসার ডাক দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে দলের ভিতরই ভিত নড়বড়ে হচ্ছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
Discussion about this post